ভূমিকা প্রায়ই দেখা যায় বই লেখার পেছনে থাকে একটি ইতিহাস। তেমনি একটি ইতিহাস আছে বইটির পেছনেও্। ষাটের দশকের শেষ দিকে - অর্থ্যাৎ ঢাকা টিভি কেন্দ্র চালু হবার অল্প কিছুদিন পরই- বিজ্ঞানের কিছু বিষয় নিয়ে টিভিতে আমি একটি সিরিজ অনুষ্ঠান করেছিলাম। তার মধ্য একটি অনুষ্ঠান ছিল টিভি সম্পর্কে।বাংলা একাডেমীতে একদিন হঠাৎ দেখা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশনা সংস্থার স্থানীয় প্রধান রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বললেন ওই অনুষ্ঠানটি দেখে তাঁর ভালো লেগেছে। খুব সহজ করে টেলিভিশনের ওপর আমি একটি বই লিখে দিলে তিনি তা প্রকাশ করতে চান। বইটি হবে আকারে ছোট, তবে চিত্রবহুল ও আকর্ষনীয় । যে কোন লোক- যে হয়তো নিয়মিত টেলিভিশন দেখে কিন্তু সেটি কিভাবে কাজ করে সে সম্বন্ধে জানে না কিছুই-যেন এ বই পড়ে টেলিভিশনের মূলনীতি সম্বন্ধে একটা মোটামুটি স্পষ্ট ধারণা পেতে পারে। ফরমায়েশ মতো মাস দুই খেটে আমি বইটির একটি খসড়া তৈরি করি।কিন্তু এরপরই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার অল্পদিন পর ওই প্রকাশনা সংস্থার কাজ বন্ধ করে দেয়। রিয়াজুল ইসলাম ইন্তেকাল করেন। কাজেই বইয়ের পাণ্ডুলিপি ছাপা পড়ে থাকে। ‘নবারুণ’ পত্রিকার তখনকার সম্পাদক আবদুস সাত্তার বইটি তাঁর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তার ফলে ১৯৮৫ সালের ঈদসংখ্যা থেকে ১৯৮৬ সালের ঈদসংখ্যা পর্যন্ত দশটি সংখ্যায় রচনাটি প্রকাশিত হয়। ‘নবারুণ’ এ প্রকাশের একটি সুবিধা এই হয়েছে যে, বেশ কিছু বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ী বইটি পুরো বা আংশিকভাবে পড়ে তার ওপর নানা মূল্যবান মতামত দিয়েছেন্ এঁদের মধ্যে রয়েছেন ড. জহুরুল হক, জামিল চৌধুরী, নুরুল হুদা, ড. আনোয়ারুর রহমান খান, আতিকুল হক চৌধুরী, সাদউদ্দীন আহমদ (বাংলাদেশ টেলিভিশন) প্রমুখ। তাঁদের সবার কাছে নানা সুপরামর্শের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ টেলিভিশ কর্তৃপক্ষ কতগুলো ছবি দিয়ে বইটির সৌষ্ঠব বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছেন। টেলিভিশনসহ ইলেকট্রনিক্সের নানা ক্ষেত্রে আজ অতি দ্রুত পরিবর্তন ঘটে চলেছে, তার ফলে বিশ শতক শেষ হতে হতে টেলিভিশনের অনেক কিছু্ই বদলে যাবে। আগামী দিনের টেলিভিশন সম্বন্ধে যেসব কথা এ বইতে বলা হয়েছে তার কিছু কিছু হয়তো আমরা শিগগিরই বাস্তবায়িত হতে দেখব। এসব পরিবর্তনের ধারা বুঝতে যদি এ বই পাঠক-পাঠিকাদের কিছুটা সাহায্য করে তাহলেই আমার শ্রম সার্থক হয়েছে বলে জানব। আবদুল্লাহ আল-মুতী
সূচিপত্র * ঘরের কোণে দুনিয়া * আজব কলের আজব কাজ * আসল নায়ক ইলেকট্রন * বিজলি দিয়ে শুরু * বিজলি থেকে বেতার ইলেকট্রনদের রাশ ধরা * সব ঢেউয়ের লীলা * ঢেউয়ের সঙ্গে খবর * ইলেকট্রনের ছবি আঁকা * দেখার ভেতর কারিগরি * কার আবিষ্কার? * আগি যুগের টেলিভিশন * ক্যামেরায় কেরামতি * উড়ে চলা ছবি * টিভি সেটের বন্দি * নানা রঙের খেলা * ঘরে বাইরে ছবি তোলা * ট্রানজিস্টার আর চিপ * উপগ্রহ থেকে ছবি * কত শত কাজ * আগামী দিনে টেলিভিশন * কবে কী ঘটেছিল * নতুন নতুন শব্দগুলো
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানসাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ আল-মুতী নিজস্ব একটি ভুবন তৈরি করেছিলেন। বিজ্ঞানের নানা বিষয় জনবোধ্য ও সরস করে পরিবেশনের যে স্বপ্ন রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন আবদুল্লাহ আল-মুতীর লাবণ্যময় রচনায় আমরা তার বাস্তবরূপ দেখতে পাই । বিজ্ঞানসাহিত্য রচনার জগতে তাই তার অনন্য একটি ভূমিকা আমরা প্রত্যক্ষ করি। ড. আবদুল্লাহ আল-মুতীর জন্ম ১৯৩০ সালে । শিক্ষাজীবন শুরু রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসায় । তারপর কলকাতা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এসসি ডিগ্রি অর্জন করার পর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৫৪ সালে রাজশাহী কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে। শিক্ষা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষা প্রশাসনে বিভিন্ন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের সচিব হিসেবে। দুরারোগ্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ ৩০ নভেম্বর ১৯৯৮। বিজ্ঞানসাহিত্যের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন ১৯৭৫ এবং ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক কলিঙ্গ পুরস্কার ১৯৮৩ সালে। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার অগণিত পাঠকের অকৃত্রিম ভালোবাসা। এ ক্ষেত্রে তাঁর বিষয়ে তিনি এখনো অপ্রতিন্দ্বন্দ্বী।