প্রথম পরিচ্ছেদ সেখ নসিরুদ্দিন এখন ভবানীপুরের একজন মধ্যবিত্ত প্রজা। গত তিন বৎসর হইতে কন্ট্রাক্টের কর্ম করিয়া, যেমন করিয়া হউক, তিনি দশ টাকার সংস্থান করিয়াছেন। তিনি বিশেষরূপে ক্ষতি গ্রস্ত হইয়া থানায় আসিয়া যেরূপ এজাহার দিতেছেন, তাহার সারমর্ম এই স্থানে পাঠকগণকে অবগত করাইব। নসিরুদ্দিন বলিতেছেন, ‘প্রায় তিন মাস অতীত হইল, আমি একজন পোদ্দারকে প্রায় ছয় সাত শত টাকা মূল্যের কতকগুলি সোনার অলঙ্কার নির্মাণ করিতে দিয়াছিলাম; অনেকবার তাগাদা করিয়াও সেই সকল গহনা আমি আর পাই নাই। কিন্তু অদ্য দিবা ১০টার সময় যখন আমি আফিস- অঞ্চলে যাইতেছিলাম, সেই সময়ে পোদ্দার আমাকে ডাকিল ও তাহার দোকান হইতে সমস্ত গহনাগুলি আমাকে প্রদান করিয়া বলিয়া দিল যে, “বিশেষ কার্যোপলক্ষে অদ্য আমি দেশে যাইতেছি, প্রায় দুই তিন মাস ভিন্ন ফিরিয়া আসিতে পারিব না, এখন আপনি গহনাগুলি লইয়া যান; আমি ফিরিয়া আসিয়া হিসাব-পত্র করিয়া দেনাপাওনা স্থির করিব।" পোদ্দারের এই কথা শুনিয়া আমি গহনাগুলি গ্রহণ করিলাম ও কিয়ৎক্ষণ সেই স্থানে দাঁড়াইয়া ভাবিতে লাগিলাম যে, 'গহনাগুলি সঙ্গে করিয়া আফিস অঞ্চলে যাই, কি আবার বাটী ফিরিয়া গিয়া উহা রাখিয়া আসি। 'আমি এইরূপ ভাবিতেছি, এমন সময় গোলাম হোসেনের পুত্র কাছেম আলিকে আসিতে দেখিতে পাইলাম। উহাকে অনেক দিবস হইতে ভাল লোক বলিয়া জানিতাম; বিশেষত আমার বাটীর নিকটে উহার বাসস্থান। আমি কাছেম আলিকে ডাকিলাম; সে নিকটে আসিল। আমি গহনাগুলি তাহার হস্তে প্রদান করিয়া বলিয়া দিলাম, “তুমি ইহা লইয়া আমার বাটীতে গিয়া আমার ভ্রাতার নিকটে দিও।” সে সম্মত হইল ও গহনাগুলি লইয়া সেই স্থান হইতে আমাদিগের গৃহাভিমুখে প্রস্থান করিল। আমিও আফিস-অভিমুখে গমন করিলাম। সন্ধ্যার সময় বাটীতে ফিরিয়া আসিয়া গহনার কথা জিজ্ঞাসা করায় জানিতে পারিলাম যে, কাছেম আলি কোন গহনা আনিয়া বাড়িতে দেয় নাই। পরে কাছেম আলির অনুসন্ধান করিলাম এবং তাহার বৃদ্ধ পিতা গোলাম হোসেনের নিকট হইতে অবগত হইলাম যে, সে গুরুদর্শন অভিলাষে কল্য বাটী হইতে গমন করিয়াছে। গহনার কথা জিজ্ঞাসা করায় বৃদ্ধ গোলাম হোসেন তাহার কিছুই বলিতে পারিল না। তাহার গুরুদেব যে কে এবং কোথায় থাকেন, তাহাও আমরা কেহই অবগত নহি। এখন মহাশয়েরা একটু অনুগ্রহ না করিলে আর আমার কোনরূপ উপায় হইবার সম্ভাবনা নাই। যদি আপনারা সন্ধান করিয়া উহাকে না ধরেন, তাহা হইলে আমার ছয় শত টাকা একেবারে লোকসান হইয়া যাইবে এবং দোষী ব্যক্তিরও উপযুক্ত দণ্ড হইবে না। আমি উহার উপর বিশ্বাসঘাতকতা-দোয আরোপ করিয়া নালিশ করিতেছি, এখন আপনাদিগের যাহা কর্তব্য হয়, করুন।'