মৃদুল ব্যানার্জি এ দফায় অনেকদিন পর গ্রামের বাড়িতে এল। গ্রাম অবশ্য এখন আর সে গ্রাম নেই। আধা-শহর হয়ে গেছে। একে উন্নয়ন বলা যায় কিনা সে নিয়ে মৃদুলের যথেষ্ট ধন্দ আছে। তবে জোরগলায় সেকথা বলতে গেলে সবাই তাকে পাগল ভাববে। তাই মনের কথা মনেই রাখে। গ্রাম যত শহুরে হয়ে উঠেছে, মৃদুলের বাড়ি আসার আগ্রহ তত কমে গেছে। জীবিকার তাগিদে তাকে বাধ্য হয়ে শহরে থাকতে হয়। গ্রামে আসে মুক্ত হাওয়ায় সবুজের মাঝখানে দুদণ্ড শ্বাস নিতে। চোখের সামনে দেখল-উর্বর জমি কিভাবে সাফ করে কংক্রিটের বাড়ি-ঘর গজিয়ে উঠল। আমবাগান পুকুর সব বুজিয়ে সুপার-মার্কেট হল। বাজারে এক-পা হাঁটতে গেলে রীতিমত গুঁতোগুঁতি করতে হয়। এখানে আর আসতে তার ভালো লাগে না। শুধু পৈতৃক ভিটে। একমাত্র দিদি ঘোরতর সংসারী। ছেলে-মেয়ে নিয়ে দিল্লীতে থাকে। গ্রামে আসার বিশেষ সময় পায় না। মা চলে যাবার পরে গ্রামে আসার আকর্ষণ আরো কমে গেছে দিদির। কিন্তু মৃদুল নিরুপায়। বাবার মৃত্যুর দশবছর পরে মা চলে গেলেন। সেও পাঁচবছর হয়ে গেল। মৃত্যুর আগে ছেলের হাত ধরে বারবার বলেছিলেন, বিয়ে-থা করলি না মেনে নিয়েছি। কিন্তু পৈতৃক ভিটেটা বজায় রাখিস বাবা। কোনো পিছুটান থাকবে না। হাতে কিছু টাকা-পয়সা জমলেই বিন্দাস হয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াবে। এইসব ভাবনা থেকেই তো সংসারের ফাঁদে পা রাখেনি মৃদুল। অথচ মা ফস করে এমন একটা কথা দাবি করে বসল-সেই পিছুটান থেকেই গেল।