সূচনা ১৯০৩ সালের ২২শে অক্টোবর বোলপুর থেকে কাদম্বিনী দেবীকে লেখা একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছিলেন, “সাকার নিরাকার একটা কথার কথামাত্র। ঈশ্বর সাকার এবং নিরাকার দুই-ই। শুধু ঈশ্বর কেন আমরা প্রত্যেকেই সাকারও বটে নিরাকারও বটে। আমি এ সকল মতামত লইয়া বাদ-বিবাদ করিতে চাহি না। তাহাকে রূপে এবং ভাবে, আকারে এবং নিরাকারে, কর্মে এবং প্রেমে সকল রকমেই ভজনা করিতে হইবে। আকার তো আমাদের রচনা নহে, আকার তো তাঁহার-ই।” আবার ১৯১০ সালের ১৩ই জুলাই আরেকটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ কাদম্বিনী দেবীকে লেখেন, “আমাদের দেশে প্রচলিত পূজার্চনাবিধির মধ্যে এমন সুগভীর তত্ত্ব আছে যা বহুমূল্য। আমাদের দেশে যাঁরা মহাপুরুষ জন্মেছিলেন আধ্যাত্মিক সাধনায় তাঁরা আশ্চর্য সিদ্ধিলাভ করেছিলেন।” এরও দুবছর পরে ১৯১২ সালের ১৮ই মার্চ আরেকটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ কাদম্বিনী দেবীকে লেখেন, “প্রতিমা সম্বন্ধে আমার মনে কোনো বিরুদ্ধতা নেই। অর্থাৎ যদি কোনো বিশেষ মূর্তির মধ্যেই ঈশ্বরের আবির্ভাবকে বিশেষ সত্য বলে না মনে করা যায় তাহলেই কোনো মুস্কিল থাকে না। তাঁকে বিশেষ কোনো একটি চিহ্নদ্বারা নিজের মনে স্থির করে নিয়ে রাখলে কোনো দোষ আছে একথা আমি মনে করিনে। কিন্তু এ সম্বন্ধে কোনো মুঢ়তাকে পোষণ করলেই তার বিপদ আছে।” বস্তুতপক্ষে ধর্ম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের উদার মনোভাবের জন্য রবীন্দ্রনাথ নিজেই কাদম্বিনী দেবীকে একবার লিখেছিলেন, “নানা কারণে ব্রাহ্ম সমাজ আমাকে ঠিক ব্রাহ্ম বলে গ্রহণ করেননি এবং আমাকে তাঁরা বিশেষ অনুকূল দৃষ্টিতে কোনোদিন দেখেননি।” (চিঠিপত্র, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ২৮)