মুখবন্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাসে শিবাজীর মতো আর একজন রাজা খুঁজে পাওয়া যাবে না যাঁকে নিয়ে ভারতবর্ষের বর্তমান দলীয় রাজনীতিতেও বিতর্কের শেষ নেই। বিতর্ক চলছে তিনশো বছর ধরেই। তবে সম্প্রতি বিতর্কটা নতুন মাত্রা পেয়েছে। একদলের মতে “এক ধর্মরাজ্যপাশে খণ্ড ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ভারত বেঁধে” দেবার জন্য প্রয়াসী হয়েছিলেন শিবাজী মহারাজ। এই দলে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। আরেক দলের মতে তিনি একজন ধর্মান্ধ দস্যুসর্দার মাত্র। এই বিতর্ক নিরসনের জন্য বইটি লিখতে চাইনি। ভারতের সামাজিক ও রাষ্ট্রনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে মানুষ শিবাজীর অন্বেষণের লক্ষ্যেই বইটির জন্ম হয়েছে। কেবল হার্ড ফ্যাকটস্ এবং ফটোগ্রাফিক বাস্তবতাও ইতিহাস নয় । ব্যাখ্যাতার নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার ওপর ইতিহাসের সত্য নির্ভর করে। ঘটনার পাশে ঘটনা সাজালেই ইতিহাসের মালা গাঁথা সম্ভব নয়। দরকার একটি শক্ত অদৃশ্য সুতো যা ঘটনাগুলিকে গেঁথে রাখে। এই সুতো হল নিরপেক্ষ সত্যান্বেষী ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ। শিবাজীর জীবনকথার বিশ্লেষণে যাতে দৃষ্টি স্বচ্ছ থাকে তার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। শিবাজীর আবেগঘন স্বাজাত্যপ্রীতি, গভীর ধর্মচেতনা, অসাধারণ নির্ভীকতা ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা তাঁকে ইতিহাসের একজনমোহিনী চরিত্রে পরিণত করেছে।আমি এই ছোটো বইটিতে মানুষ শিবাজীকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি। স্যার যদুনাথ সরকারের তথ্য আমার প্রধান আশ্রয় তবে আধুনিক গবেষণালব্ধ তথ্যকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রচলিতনানা কল্পকাহিনি, গল্পকথা, সাহিত্য –এগুলিইতিহাস নয়কিন্তু এরমধ্যে মানুষকীভাবে শিবাজীকে দেখতেভালোবাসেন তা ধরা পড়েছে, তাই সেগুলিরও উল্লেখ আছে।