"ইমাম গাজ্জালীর আত্মজীবনী : যেভাবে আমি সত্যকে পেয়েছি" বইয়ের ভূমিকার অংশ থেকে নেয়া: ‘যেভাবে আমি সত্যকে পেয়েছি’ প্রথাগত অর্থে গাজ্জালীর কোন আত্মজীবনী নয়। ইবনে খালদুন- যিনি ভেবেছেন এবং করেছেন অনেক নতুন কিছু- এর পূর্বে, কোন আরব লেখক-চিন্তাবিদ লেখেননি পরিচিত রূপের জীবন বর্ণনামূলক, কোন আত্মজীবনী। এই বইটিতে পাওয়া যাবে একটি বিশেষ- গাজ্জালীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; পর্বের মানস বিবর্তনের আত্মজ উদঘাটন, স্বগত স্বীকৃতি, যাকে তুলনা করা যেতে পারে সেইন্ট আগস্টিনের স্বীকারােক্তি’-র সাথে। . অনুবাদে আমার সীমিত হলেও, অভ্যস্ততা আছে। তবে সে অভ্যস্ততার স্বাচ্ছন্দ্য ভেঙ্গে গেছে গাজ্জালীর এ-আত্ম উদঘাটন অনুবাদ কালে। চিন্তার বিশেষত গাজ্জালীর মত, মানব চিন্তা-ইতিহাসের এক প্রধান চিন্তা-ব্যক্তিত্বের; অনুবাদ দুরূহ। তাকে দুরূহতর করেছে কালিক। ব্যবধান। গাজ্জালী, সন্দেহ নেই, দর্শনের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক। তবে, তিনি, প্রধানত এবং পরিণতত, সূফী তাত্ত্বিক-সাধক। “যেভাবে আমি সত্যকে পেয়েছি তার সূফীভাবনার প্রধান প্রতিনিধি। এবং, নিঃসন্দেহে সূফী সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ। অবতরণিকায়, এই প্রসঙ্গতা মনে রেখে, বিশ্লেষিত আলােচনা করেছি সূফীতত্ত্বের উদ্ভব-বিকাশ সম্পর্কে। | বইটি রচনা-প্রকাশে আমাকে সহযােগিতা করেছেন অনেকে। তাদের সবার প্রতি বােধ করছি সনিষ্ঠ কৃতজ্ঞতা। সূফীতত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় আমাকে, বিভিন্নভাবে ক্লান্তিহীনভাবে আমার বিরক্তিকর ফরমাশ মেনে, ছােট ছােট বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে দিয়ে, বুঝে না বুঝে প্রশংসা করেআমাকে অনুপ্রাণিত করেছে আমার ছােট বােন খাদিজা। ওর জন্য থাকবে আমার কয়েক জীবনের ভালবাসা। চমৎকার প্রচ্ছদটি করে দিয়ে আমাকে চরম সুখী করেছে তরুণ প্রতিভাবান শিল্পী-শিল্পসমালােচক হা. মীম, • কেফায়েতুল্লাহ। তাকে কি বলা উচিৎ এই মুহূর্তে ভাবতে পারছি না। সবশেষে প্রকাশক অস্ট্রিক আর্য ভাইয়ের জন্য এক বুক ধন্যবাদ।
Title
ইমাম গাজ্জালীর আত্মজীবনী : যেভাবে আমি সত্যকে পেয়েছি
বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ., সংক্ষেপে ইমাম গাজ্জালী ছিলেন একজন সুফিসাধক ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর দর্শন ও চিন্তাধারা বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা সুতা সংক্রান্ত হওয়ায়, সেখান থেকে তার নাম গাজ্জালী হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যেহেতু 'গাজ্জাল' শব্দের অর্থ সুতা। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৪৫০ সাল) ইমাম গাজ্জালী ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই তুস নগরীতেই তার শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্ম নেন, যে যুগে শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। একইসাথে বিস্তার লাভ করেছিলো পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনেরও। ইমাম গাজ্জালী এসকল বিষয়েই দীক্ষা লাভ করেন এবং বিশেষ করে ঐ যুগের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছ থেকে ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। মুসলিম দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, ফিকহশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী । জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান বাগদাদের সেরা বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনা করেন। তিনি তৎকালীন বাদশাহর দরবারেও আসন লাভ করেন। তবে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে তীব্র আকর্ষণ থাকায় তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য দেশ-বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন ও নানা বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম গাজ্জালী রহ. বই রচনার মাধ্যমে তাঁর অর্জিত এসকল জ্ঞান মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমূহ-তে তিনি আলোচনা করেছেন সুফিবাদ, ইসলামি দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে, এবং তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চার শতাধিক। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'আসমাউল হুসনা', 'মিশকাতুল আনোয়ার', 'ফাতাওয়া', 'মিআর আল ইলম', 'হাকিকাতুর রুহু', 'দাকায়েকুল আখবার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১১১১ খ্রিস্টাব্দে (৫০৫ হিজরি) তিনি নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে মৃত্যবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় একজন মনীষী।