খিলাফতে রাশিদার পর ইসলামি সাম্রাজ্যের নেতৃত্ব দিয়েছে বনু উমাইয়ারা। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি ‘উমাইয়া খিলাফতের ইতিহাস’ সিরিজের দ্বিতীয় খণ্ড। এই খণ্ডে উমাইয়াদের দ্বিতীয় খলিফা ইয়াজিদের পরিচিতি ও তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। কারবালার মর্মান্তিক যুদ্ধ, হুসাইন রা.-এর শাহাদাত, ইয়াজিদকে অভিসম্পাত করা যাবে কি যাবে না, গ্রন্থটিতে এর সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যাবে। হাররার যুদ্ধ, হাররা-পরবর্তী মদিনায় উমাইয়াদের লুটতরাজ, ইবনু জুবায়েরের সঙ্গে ইয়াজিদবাহিনীর যুদ্ধ, পবিত্র কাবায় অগ্নিকাণ্ড, ইয়াজিদের হঠাৎ মৃত্যু, ইয়াজিদের পরে মুআবিয়া ইবনু ইয়াজিদের খিলাফতলাভ, তাঁর পদত্যাগ ইত্যাদিও সবিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে আমিরুল মুমিনিন আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়েরের জীবনবৃত্তান্ত, পিতা-মাতা ও স্ত্রী-সন্তানদের পরিচয়, তাঁর জ্ঞান, সাহসিকতা ইত্যাদির আলোচনা। তুলে ধরা হয়েছে ইবনু জুবায়ের কর্তৃক ইয়াজিদের বায়আত প্রত্যাখ্যান, মক্কাকে আন্দোলনের কেন্দ্র নির্বাচন এবং তাঁর বিদ্রোহের কারণসমূহ। ইবনু জুবায়েরের হাতে মুসলিমবিশ্বের বায়আত, মারওয়ান ইবনুল হাকামের বিদ্রোহ, মারওয়ানের মৃত্যু এবং তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ানের খিলাফতের মসনদে আরোহণের ইতিবৃত্তও তুলে ধরা হয়েছে। সব শেষে তুলে ধরা হয়েছে ইবনু জুবায়েরের অবরুদ্ধ হওয়া ও তাঁর শাহাদাতের বিবরণ, তাঁর খিলাফতের সমাপ্তির উপাখ্যান ও পতনের কারণসমূহ।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০