দুনিয়ার জীবন শেষে আখিরাতের প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে কর্মফল অনুযায়ী নির্ধারিত চূড়ান্ত দুটি ঠিকানার নাম জান্নাত ও জাহান্নাম। জান্নাত অতুল নিয়ামতের আধার, যেখানে নেই কোনো কষ্ট-ক্লেশ বা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তাতে রয়েছে কেবলই সুখ-শান্তি আর আনন্দ-বিলাসের মনোরম সব ব্যবস্থা। পক্ষান্তরে জাহান্নাম ভীষণ শাস্তি ও ভয়ংকর এক স্থান, যেখানে আরামের লেশমাত্রও নেই। তাতে রয়েছে কেবলই আক্ষেপ-আর্তনাদ আর অসহনীয় কষ্ট-যন্ত্রণা। সম্পূর্ণ বিপরীত অনন্তকালের এ দুটি স্থান আল্লাহ তাআলা প্রস্তুত করে রেখেছেন তাঁর বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী বান্দাদের জন্য। জান্নাত আল্লাহর আনুগত্যশীল মুমিন বান্দাদের চিরস্থায়ী আবাস; আর জাহান্নাম কাফির-মুশরিকদের চিরস্থায়ী ঠিকানা। আর মুমিনদের মাঝে যারা আল্লাহর নাফরমানির দরুন জাহান্নামে যাবে, তারাও একটা সময় মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বস্তুত আখিরাতের সর্বশেষ এ দুটি ঠিকানা—জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান ও উপলব্ধি যত স্বচ্ছ হবে, ততই আমরা দুনিয়ার ধোঁকা ও প্রবঞ্চনা থেকে সর্তক হয়ে আসল গন্তব্যে পৌঁছার পাথেয় লাভে মনোযোগী হতে পারব। জাহান্নামের ভীষণ শাস্তির কথা জানা থাকলে গুনাহের পথে কদম বাড়াতে অন্তরে ভীতির সঞ্চার হবে। তদ্রূপ কুরআন-হাদিসে বর্ণিত জান্নাতের অতুল নিয়ামত ও সুখ-শান্তির কথা জানা থাকলে তা লাভের আশায় দুনিয়াতে নেক আমলে মশগুল থাকার প্রতি অন্তরে বেশ আগ্রহ জাগবে। এই জন্যই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তির কিছু নমুনার কথা যেমন বলেছেন, বলেছেন জান্নাতের নয়নজুড়ানো নানান নিয়ামতের কথাও। রাসুলুল্লাহ সা.-ও হাদিস শরিফে জান্নাত-জাহান্নাম ও এ দুটোর অধিবাসীদের নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। . প্রিয় পাঠক, বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহর দলিলসমৃদ্ধ তথ্যবহুল একটি রচনা। এটি ড. উমর সুলাইমান আল-আশকার রচিত পরকাল সিরিজের তৃতীয় বই (الجنة والنار)-এর সরল অনুবাদ। বইটি জাহান্নাম ও জান্নাত নামে দুটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত হয়েছে। এর প্রতিটি অধ্যায় আবার সন্নিবেশিত হয়েছে কয়েকটি পরিচ্ছেদে। জাহান্নামের শাস্তির ধরন ও জান্নাতের নিয়ামতরাজির আলোচনা ছাড়াও এতে জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত মতের অপনোদন করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে এ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর সঠিক মত ও আকিদা। ইন-শা-আল্লাহ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করে পাঠক জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। জাহান্নামের শাস্তির কথা জেনে তা থেকে বাঁচার এবং জান্নাতের নিয়ামতরাজির কথা জেনে তা লাভের আশায় নেক আমলে সচেষ্ট হবেন।
ড. ওমর সুলাইমান আল-আশকার। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিনের নাবলুস প্রদেশের ‘বারকা’ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয়া এ মনীষী ছিলেন বিখ্যাত ফিকহ মূলনীতিবিদ মুহাম্মদ সুলাইমা আল-আশকারের সহোদর। শিক্ষাজীবনের শুরুলগ্নে ফিলিস্তিন থেকে তিনি সৌদি আরবে চলে যান। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন কিং সাওদ ইউনিভার্সিটি থেকে। এরপর সেখানকার ‘কুল্লিয়া শরিয়া’ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও শরিয়া বিষয়ে ডক্টরেট অর্জন করেন। তিনি একাধারে জর্ডান ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আল-যারকা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছিলেন। ছিলেন জর্ডানের রাষ্ট্রীয় ইফতাবোর্ডের সম্মানিত সদস্য। ইসলামি আকিদা ও সমকালীন বিশ্বপ্রেক্ষাপট নিয়ে তাঁর গবেষণাপূর্ণ রচনাবলি আরববিশ্বে ব্যাপক ও বহুল প্রচার লাভ করেছে। ইসলামি আকিদা, সমকালীন প্রেক্ষাপট, মুসলমানদের অবস্থা এবং যুগচাহিদার প্রেক্ষিতে তাদের করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ক বহু গ্রন্থ রচনা করেন এ বিদগ্ধ মনীষী। ১০ আগস্ট ২০১২ ইং মোতাবেক ২২ রমযান ১৪৩৩ হিজরিতে অসুস্থ অবস্থায় ৭২ বছর বয়সে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।