উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ.-এর খেলাফাতকালে মুসলিম-সমাজে কীভাবে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন―এ গ্রন্থটি মূলত তারই বাস্তব প্রতিচ্ছবি। প্রসিদ্ধ সমাজ সংস্কারক এবং মুজাদ্দিদ উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ.-এর সময়কালই গ্রন্থটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এতে স্থান পেয়েছে তার জীবনঘনিষ্ঠ ঘটনাবলীর সমাহার, ইলম অন্বেষণে পদক্ষেপ, ক্ষমতার মসনদে আরোহণ, রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন, শূরা নীতি ও ইনসাফের গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানুষের মাঝে সাম্য নিশ্চিতকরণ ও ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইত্যাদি বিষয়াবলী। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটিতে উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ.-এর ঈমানী দৃঢ়তা, ইলমী গভীরতা, প্রগাঢ় প্রজ্ঞাপূর্ণ চিন্তাধারা, অলংকারপূর্ণ বাচনভঙ্গি, উত্তম শিষ্টাচার ও উম্মাহর প্রতি তার অসামান্য অবদানের অনবদ্য চিত্রই ফুটে উঠেছে। প্রখ্যাত ইসলামী মনীষীগণ তাকে ইসলামের একজন মুজাদ্দিদ ও মুসলিহ বলে গণ্য করেছেন। তার জীবনী, মাহাত্ম্য ও মর্যাদা বর্ণনা করে রচনা করেছেন বহু গ্রন্থ। তা সত্তে¡ও দীর্ঘদিন ধরে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের জন্য ইসলামী ইতিহাসের মহানায়ক উমর ইবনে আবদুল আযীয রহ.-এর সুবিস্তর জীবনচরিত সম্বলিত একটি গ্রন্থের অভাব অনুভ‚ত হয়ে আসছিল। যদিও তার ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কিত কয়েকটি গ্রন্থ বাজারে পাওয়া যায়, তবে সুনির্দিষ্টভাবে তার সংস্কারমূলক কর্মকাÐের আলোচনা সম্বলিত এটিই প্রথম গ্রন্থ।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০