কলিংবেলটা বেজে উঠলো। ঘড়িতে বাজছে দুপুর ৩.৩০টা। ফারিয়া বসে বই পড়ছিলো। আওয়াজ শুনে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। অন্তু এসেছে। হাফাতে হাফাতে ঘরে ঢুকেই কাধের ব্যাগটা ছুড়ে দিয়ে ধাম্ করে সোফায় বসে পড়লো। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। ফারিয়া ছেলের কাছে যেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, -কিরে, খুব ক্লান্ত? -আর বলোনা আম্মু। স্কুল করে আবার প্রাইভেটে দৌড়াদৌড়ি। আর ভাল লাগে না। -আচ্ছা। কি আর করা। যা হাত মুখ ধুয়ে আয়। খেতে দিচ্ছি। -ঠিক আছে, বলে উঠে চলে যায় অন্তু। অন্তু ক্লাস সেভেনে এ পড়ে। পড়াশোনার এখনই যা চাপ, সে দম ফেলতেও সময় পায় না। আজকাল কি যে হয়েছে, স্কুলে টিচাররা ঠিকভাবে পড়ান না। এই কারণে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়তে যেতে হয়। বাসায় এসে রেস্ট নিয়ে নিজে পড়তে বসতে বসতে সন্ধ্যা লেগে যায়। খেলাধুলাও করতে যেতে পারেনা। এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন ফারিয়া। রাত ১১.৩০টা। অন্তু নিজের ঘরে বসে বসে গল্পের বই পড়ছে। এতক্ষণ পড়াশোনা করে ভাবলো একটু বসাই যায় বইটা নিয়ে। খুব ইন্টারেস্টিং একটা বই। ভূতের গল্প। একটা বাচ্চা ভূতকে নিয়ে। নাম টুনু। এর কান্ডকারখানা এমন, অন্তু ভয় পাবে কি, ও তো হাসতে হাসতেই গড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে ওর বাবা আসলেন, -কিরে এখনও ঘুমাসনি? -না আব্বু। -কাল ক্লাস নেই? -আছে। ঘুমাবো একটু পরই। -আচ্ছা। ঘুমিয়ে পড়িস তাড়াতাড়ি। গুড নাইট। -গুড নাইট। পুরো নীরব হয়ে গেছে বাসা। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্তু বই পড়ছে আর একটু পর পর হেসে উঠছে। হঠাৎ, একটা শব্দে ও চমকে উঠলো। কেউ যেন মনে হচ্ছে কথা বলে উঠলো। পাশে তাকিয়ে অন্তু দেখে একটা বাচ্চা পা ঝুলিয়ে বসে আছে। ও হা করে কতক্ষণ তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলে, এটা কে? কোথা থেকে আসলো? ঠিক এই সময় বাচ্চাটা কথা বলে উঠলো, -আমাকে চিনতে পেরেছো? -নাতো! তুমি কে? -চিনো নি? আমি তো টুনু। -টুনু! তুমি এই বইয়ের ভূতটা? এই কথা বলে অন্তু একবার হাতে রাখা বইটার দিকে তাকালো। -তুমি এই বইটা থেকে কিভাবে বের হয়ে এলে? - আরে আমি তো ভূত। তাই আমি অনেক কিছু করতে পারি। -ইইই! সত্যি? -হ্যাঁ। -মজার মজার খাবার এনে দাও তো। -এটা তো পারবো না। আমার বাবা এটা পারবে। আমি তো, ছোটখাটো কিছু কাজ করতে পারি। -যেমন? হঠাৎ অন্তু দেখে যেখানে ভূতটা ছিল, ওখানে কিছু নেই। ও ভাবলো, নিশ্চয়ই এতক্ষণ ভুল দেখেছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার টুনুকে দেখলো অন্তু। জিজ্ঞেস করলো -কোথায় গিয়েছিলে? -অদৃশ্য হয়ে গেলাম। এটা আমি ভালই পারি!! -বাহ্! মজা তো। টুনু খুক খুক করে হাসতে থাকে অন্তুর কথা শুনে। -তা হঠাৎ তুমি আমার কাছে এলে কেন? কৌতুহলী হয়ে অন্তু জিজ্ঞেস করে টুনুকে, -আমি ভাবলাম, তোমাকে কিছু ব্যাপারে সাহায্য করবো। তাই চলে এলাম। -সাহায্য করবে? কি নিয়ে সাহায্য করবে? অবাক হয় অন্তু। কি বলে বাচ্চা ভূতটা?