পলাশী থেকে ধানমন্ডি : নবাব থেকে শেখ মুজিব একটি সম্পাদিত গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর রচিত বিশিষ্টজনদের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ স্থান পেয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে গিয়ে যে সমস্ত আন্দোলন, বিদ্রোহ ঘটে গিয়েছে তাঁর আংশিক উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ বইটিতে স্থান পেয়েছে। এটাই চিরসত্য যে ইতিহাসে একই ঘটনা দুইবার ঘটে না। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে আমার কাছে মনে হয়। বলছি ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা। বলা যায় প্রায় সম্পূর্ণ মিল রয়েছে পলাশীর বিপর্যয় ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মধ্যে। কেবল ঘটনা সংঘটনে নয়, কার্যকারণ সম্বন্ধেও। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মহান রাষ্ট্রনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট তাঁরা উভয়েই ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্ণধার রবার্ট ক্লাইভের অধিকতর বাণিজ্যিক সুবিধা লাভের আশায় বিদেশি বেনিয়া চক্রান্তের সাথে যুক্ত হয়Ñ মীর জাফর, ঘষেটি বেগম, উর্মিচাঁদ, রায়দুর্লভ ও জগৎশেঠরা। তাঁরা তরুণ নবাব সিরাজউদ্দৌলার ওপর হিংসায় বশীভূত হয়ে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি করেন এবং তাঁর সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। অপরপক্ষে, স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপিতা মহানায়ক, বঙ্গবন্ধুও ষড়যন্ত্রের নীলনকশায় পতিত হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে এবং বাঙালি জাতির হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। এই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি করেছিলেনÑ খন্দকার মোশতাক, কর্নেল ফারুক, ডালিম প্রমুখ। নবাবের পতনের মূল কারণ তাঁর উদারতা ফলে তাঁর নিকট লোকজনদের বিশ্বাসঘাতকতায় বলী হয়েছেন। অপরদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁর কাছের কিছু বিশ্বাসী লোকজনের বিশ্বাসঘাতকতায় দিতে হয়েছে সপরিবারে আত্মত্যাগ। ইতিহাসে এই দুই ঘটনা সংঘটনের কী বিস্ময়কর মিল! পলাশীর বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়েই বাংলার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আজ্ঞাবহ মীরজাফরকে নবাবের আসনে বসানো হয়। অন্যদিকে ১৫ আগস্ট রক্তাক্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে খন্দকার মোশতাকও রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। ইতিহাসের এই দুই ঘটনার পার্থক্য এই যে পলাশীতে ইংরেজ বাহিনী সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। আর ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রে বৈদেশিক শক্তি দূর থেকে কলকাঠি নেড়েছিলেন; যারা আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং রাষ্ট্রনায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উভয়েই বাংলা সহজ-সরল-লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, শোষিত পদদলিত, মানুষের কথা বলেছেন। একমাত্র বঙ্গবন্ধুই তাদের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পিত কল্যাণময় অর্থনীতি চালু করেছিলেন। এবং আজকের বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই সুখী-সমৃদ্ধ, সবার জন্য বাসযোগ্য সোনার বাংলা কায়েম সম্ভব। আর এটিই স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রকৃষ্ঠ পথ।