নবিজি ﷺ-এর জীবনী অত্যন্ত মহান ও মর্যাদাপূর্ণ একটি বিষয়। নবি ও রাসূল হিসেবে মুহাম্মাদ ﷺ-এর আগমন এবং ইসলামের উত্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় তাঁর সীরাত থেকে। অসহনীয় কষ্টের পর আল্লাহ কীভাবে সাফল্য দেন, তা উপলব্ধি করা যায় নবি ও সাহাবিদের জীবনী থেকে। অন্য যে কারও জীবনীর চেয়ে নবিজীবন অধ্যয়নে শিক্ষা লাভ করা যায় অনেক অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা কীভাবে তাঁর নবিকে প্রস্তুত করলেন, মানুষের অন্তরে কীভাবে প্রোথিত করলেন তাঁর কিতাবের শিক্ষা, অনেক শক্তিশালী ও বিশাল বিশাল শত্রুদলের বিরুদ্ধে ছোট্ট একটি দলকে কেমন করে বিজয় দান করলেন, চারদিকে মিথ্যে আর পাপ-পঙ্কিলতার সয়লাবের মাঝে ইসলামের সত্য ও সৌন্দর্যকে কীভাবে সমুন্নত করলেন—এসবের মাঝে নিহিত রয়েছে বহু প্রজ্ঞা।নবি ﷺ-এর জীবনী পড়ে মুসলিমরা তাদের দ্বীনকে গভীরভাবে বুঝতে শেখে। তাই নবিজির জীবদ্দশা থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত আলিমগণ নবিজীবন-সংক্রান্ত তথ্যের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে খুবই সাবধানী। কিন্তু অনেকেই নবিজীবন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এতে মনগড়া, অবান্তর আলোচনা প্রবেশ করিয়েছে। ফলে দিনশেষে দেখা যায়, ইসলামের নবির জীবনীতে অনেক তথ্য স্বয়ং ইসলামের শিক্ষারই বিপরীত।‘রাসূলে আরাবী’ বইটি বিশুদ্ধ উৎসের ভিত্তিতে লেখা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবনী। এই বইটি লিখতে লেখক সাহায্য নিয়েছেন কুরআন, বিশুদ্ধ তাফসীর, বিশুদ্ধ হাদীস এবং অন্যান্য বিশুদ্ধ সীরাহ-গ্রন্থের মতো বিশুদ্ধ উৎসের।
আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরি (১৯৪৩-২০০৬) পুরো নাম সফিউর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আকবর ইবনে মুহাম্মাদ আলি ইবনে আব্দুল মুমিন মুবারকপুরি আযমি। তিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামিক লেখক এবং ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস। তার লেখা রাসূল সা.-এর জীবনীগ্রন্থ আর-রাহিকুল মাখতুম সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহু ভাষায় অনুদিত একটি বই আধুনিক সিরাতগ্রন্থ। তিনি ১৯৪২ সালের ৪ জুন ভারতের আযমগড় জেলার হোসাইনাবাদের মোবারকপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে লেখাপড়া করেন এবং আরবী ভাষা, ব্যকরণ, সাহিত্য, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, তাফসির, হাদিস ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি শরীয়াহ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন একই সাথে মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে মুবারকপুরের দারুত তালিম মাদরাসায় এবং ১৯৭৪ সালে বেনারসের জামিয়া সালাফিয়ায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সাল হতে তিনি মদিনাস্থ আন্তজার্তিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসূল সা. বিষয়ক গবেষণা ইন্সটিটিউটে কর্মরত থাকেন। সর্বশেষ রিয়াদের মাকতাবায়ে দারুস সালামে গবেষণার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া বেনারসের মাসিক মুহাদ্দিস পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন। আরবী ও উর্দু ভাষায় তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব। ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর জুমাবার বেলা দু’টায় এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে এই মহান মনীষী মাওলার সান্নিধ্যে চলে যান।