আবদুল হাই শিকদার বিষয়বস্তু হিশাবে তাঁর কবিতায় প্রেম থেকে দ্রোহ স্পর্শ করে বিপ্লবী প্রেরণার প্রতি আন্তরিক অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন। অতীন্দ্রিয় চেতনার মর্মস্পর্শী ব্যঞ্জনার অভিঘাতকে আত্মা ও পরমাত্মার বায়বীয় অস্তিত্বে চূড়ান্তরূপে অঙ্গীভূত না করে স্থাপন করেছেন মানব অস্তিত্বের ইহলৌকিক পার্থিব ভূগোলে। তাঁর ব্যক্তিগত কামনা-বাসনা-তৃষ্ণা-অভিলাষ ইত্যাদি ব্যক্তিসুখের আত্মবলয় থেকে সামষ্টিক কল্যাণের জন্য উৎসর্গ করে তিনি স্থাপন করেছেন অন্তহীন কৃতজ্ঞতা অর্জনের অনন্য দৃষ্টান্ত। পুঁজিবাদী আগ্রাসনের নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবার উদাত্ত ও আন্তরিক আহ্বানকে বিশ্বাসযোগ্য করে তাঁর মতো আর কোন কবি উত্থাপন করেননি। কাব্যের মৌলিকত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে আবদুল হাই শিকদারের কবিতা বিষয়গত দিক থেকে তুলনারহিত। ঋজুভঙ্গি, প্রত্যক্ষ বিরুদ্ধতা, দ্ব্যর্থহীন সমর্পণ এবং অকপট উন্মোচনে আবদুল হাই শিকদারের কবিতা বাঙলা-সাহিত্যে অনন্য সংযোজন। যুগধর্ম স্বভাবকে মেনে তাঁর কবিতা অতিক্রম করে যায় যুগের বৈশিষ্ট্য। তাঁর কবিতা একবিংশ শতাব্দের স্তম্ভরূপে বাংলা কবিতার কাব্যচিন্তা ও কাব্যস্বভাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান নির্ণায়ক। অতএব, আবদুল হাই শিকদারের কবিতা এক অপ্রতিরোধ্য শিল্পসত্তা; যা জীবন ও সাহিত্যের পথপ্রদর্শক রূপে বরণীয়। বাঙলা কবিতার অনতিক্রান্ত বৃত্ত অতিক্রম করিয়া রবীন্দ্র-নজরুল-উত্তর কবিতার যে আবিশ্ব-বিস্তৃত পটভূমি রচিত হয়েছে আবদুল হাই শিকদার এর অন্যতম প্রধান প্রতিভূ।
Title
আবদুল হাই শিকদারের কবিতা বিশ্ববীক্ষার অপরাজেয় প্রতিভূ