দেশভাগ আমাদের জাতীয় জীবনের একটি যদি হয় অভিশাপ, তাহলে আমাদের বাঙালি জীবনে আরেকটি অভিশাপ হল বাংলা ভাগ। ভিটেমাটি ছেড়ে লাখ লাখ মানুষ পারাপার করেছে।আবার অনেক মানুষ বিপন্ন হয়ে বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কবলে পড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।আমাদের আরো মনে রাখতে হবে এই পারাপারটা একপক্ষীয় ছিল না।পারাপারটা ছিল দ্বিপক্ষীয়।তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেমন হিন্দু বাঙালিরা এসেছেন, তেমনি এই পশ্চিমবঙ্গ থেকেও ঢালাও হারে বাঙালি মুসলিমরা তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান বা অধুনা স্বাধীন বাংলাদেশে চলে গেছে।বিশেষ করে ১৯৬৪ সালে কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গে যে দাঙ্গা হয়েছিল তার প্রভাব এখানকার বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপকভাবে পড়েছিল।আমাদের বাংলা সাহিত্যে ভিটেমাটি ছাড়া নিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ,মনিশঙ্কর মুখোপাধ্যায় , অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় , প্রফুল্ল রায় কথা সাহিত্য করেছেন। কিন্তু এগুলো তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান বা অধুনা বাংলাদেশ থেকে বাঙালি হিন্দুদের ভিটেমাটি ছাড়াদের নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলিমদের দেশ ছাড়া বা ভিটেমাটি ছাড়ার কাহিনী নিয়ে সেভাবে কথাসাহিত্য হয়নি।ব্যতিক্রম কিছুটা হাসান আজিজুল হকের " আগুনপাখি"।তবে খুব গভীরতর নয়। " প্রত্যাবর্তন " উপন্যাসের মধ্যে এসেছে মুর্শিদাবাদের সাজিদদের পরিবারের কাহিনী নিয়ে।১৯৬৪ সালে নানা কারণে দেশ ছেড়েছিলো সাজিদের বাবা ও তাদের পরিবার।পূর্বপাকিস্তানে গিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন সাজিদের পিতা।আবার দেশের মায়ায় সাজিদের পিতা সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে চলে এসেছেন।এটা মানতে পারেননি সাজিদ ও তার মা।তাই নিয়ে কাহিনী বিস্তৃত।পাশাপাশি রয়েছে সাজিদ-রোজির প্রেম উপাখ্যান।সাজিদের কলকাতার রাজপথে কীভাবে এক অচেনা মুক্তিযোদ্ধা কবি মোহন হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হল।সেই মোহন তাকে বাংলাদেশে নিয়ে গেলেন। তারপর কাহিনীর বিস্তার।পাঠক তৃপ্ত হলে লেখকও তৃপ্ত হবেন।