'নঞর্থক' (Noyorthok ) মানে না-বোধক, নেতিবাচক (Nagative), নাস্তি বা অনুপস্থিতি বোঝায়। তবে এর দার্শনিক দিকও রয়েছে। আসলে মানুষের জীবনে সব রসদ বা উপাদান আসে এক ধরনের অভাববোধ তৈরি করার জন্য। মানুষ এ অভাববোধকে পূরণ করতে গিয়ে পূর্ণতা পায় না বরং এক অন্তহীন অভাববোধ তথা নঞর্থক জগতের ভেতর ঢুকে পড়ে। অন্তত এ গ্রন্থের মূল চরিত্র রঞ্জুর চারপাশের মানুষের পৃথিবীটা এমনই—সকল সঙ্গ আসে আরও নিসঃঙ্গ করতে। প্রেম আসে নিকোটিনের মতো—ঠিক একটা প্রজাপতির মতো সুন্দর আর স্বল্পায়ু। জীবনের সব সৌন্দর্য, স্বপ্ন, প্রেম, ভালোবাসা তাদের মাঝে ক্ষণস্থায়ী এক রোমান্টিক ভাবের জন্ম দিলেও দিনশেষে তারা সবাই নঞর্থক। এক ধরনের অসুখী, অভাবী এবং নঞ জগতের মানুষ। এ থেকেই মূলত গ্রন্থটির নামকরণ। ২০১৭ সালে যখন ইয়েস্তেন গার্ডারের মায়া উপন্যাসটা পড়ি তখন একটা চিন্তা উসকানি দেয় মনে। একটা চিঠিকে কেন্দ্র করে গার্ডার এমন একটা উপন্যাস লিখেন যেখানে আমরা নিছক কোনো গল্প বা কিস্সা-কাহিনি পাই না বরং জগৎ, জীবন ও সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনের একটা অনুসন্ধান দেখতে পাই—একজন দার্শনিক ও বিবর্তনবাদীর চোখে। তখন থেকেই একটা ভাবনা আসে একটা কিছু লেখার। ইচ্ছে জাগে গল্প বলার ছলে জগৎ, জীবন, প্রেম, ভালোবাসা, আরও বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ের মনস্তাত্ত্বিক ও দার্শনিক দিকগুলোকে একটা ভিন্ন ন্যারেটিভ-এ উপস্থাপন করি। তখন রঞ্জু নামে ছোটো ছোটো কিছু গল্প লিখি । সেগুলো বিভিন্ন ওয়েবজিনে প্রকাশিত হয় এবং উৎসাহও পাই পাঠকের কাছ থেকে। ধীরে ধীরে লক্ষ করলাম অনেকগুলো গল্প হয়ে গেল যেগুলো গুচ্ছ গুচ্ছ ঘাসের মতো আপাতদৃষ্টিতে আলাদা হলেও একটা আরেকটার সাথে সম্পৃক্ত। এটাকে রাইজোমেটিক মেথডও বলে। আলাদা পড়া যায় আবার একসাথে পড়লে একক ও অবিচ্ছিন্ন মনে হবে। যেহেতু প্রথাগত কোনো লেখা নয় তাই পড়তে পড়তে অনেক সময় প্রবন্ধের মতো লাগবে। এটা স্বাভাবিক। একদিকে নিরেট গল্প যেমন আছে, অন্যদিকে এর ভেতরকার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, দর্শনের ছোঁয়াও পাবে পাঠক। তবে গল্প বয়ানের রসবোধ আর ভাব-মেজাজে কাফকা, কামু আর মুরাকামি আমাকে বেশ প্রভাবিত করে। তার আবছা প্রভাবও কেউ কেউ এখানে পেতে পারেন।