ভিন্ন ভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান ওদের। ভিন্ন টাইম জোন। একজনের ঠোঁট যখন সকালের কফির কাপ ছোঁয়, অন্যজন তখন দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে, আরেকজন হয়ত তখন মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে পাশ ফেরে। তবু এক অদৃশ্য সূতো কিভাবে যেন বেঁধে রাখে তাদের। তারা নিজেরাও অবগত নয়, সচেতন নয়, সেই বাঁধন সম্পর্কে। সেই সূতোয় সামান্য টান পড়তেই তরঙ্গ খেলে যায় হৃদয়ে। কয়েক মুহুর্তের জন্য হলেও নিজেদের বর্তমান বৃত্তকে বিস্মৃত হয় তারা। ডুব দেয় স্মৃতির গহনে। হয়ত বা নিজেদের অজান্তেই। প্রিজমের মধ্যে দিয়ে সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত হয়ে যেমন সৃষ্টি করে অগ্নি স্ফূলিঙ্গ, ওদের সবার সম্মিলিত স্মৃতিচারণে তেমনি ভাবেই জেগে ওঠে অতীত। সোনার কাঠি রূপোর কাঠির ছোঁয়ায় বহু যুগের ঘুম ভেঙে উঠে বসে রাজকন্যা। ধূসর বিস্মৃতির পর্দা সরিয়ে সামনে আসে ভুলে যাওয়া দিনযাপন। কথা বলে ওঠে ফেলে আসা সময়। ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে পরিক্রমণ করে আড়াই দশক সময় পথ। সেই পথের শেষে তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে অলৌকিক, মায়াবী ক্যাম্পাস এক । গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে আড়াইশো বছরের বুড়ো বটগাছের গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা শতাব্দী-প্রাচীন সেই কলেজ-ক্যাম্পাস অপেক্ষা করে আছে তার ছায়াশীতল, সবুজ আঁচল বিছিয়ে। জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত সৈনিক ওরা ক'জন- মন্ত্রমুগ্ধের মত ফিরে চলে সেই স্নিগ্ধ আশ্রয়ের সন্ধানে। স্মৃতির সরণি বেয়ে। মন-কেমন করা এক বিকেলের আলো ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবী জুড়ে। অনেকগুলো বছর, অনেক হাজার মাইল দূরের কোনো এক রাস্তায় জ্বলে ওঠে সাঁঝবাতি।