সেকালের পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা অথচ আচার-আচরণ একান্তই আটপৌরে পিতা আবদুল হালিম চৌধুরী এবং সাধারণ অথচ ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বসম্পন্না স্নেহশীলা মাতা আফিয়া বেগমের চৌদ্দ ছেলেমেয়ের একজন ফেরদৌসী মজুমদার। পিতামাতার সততাপূর্ণ ন্যায়নিষ্ঠ মানবিক জীবনসাধনা একান্ত সহজিয়াভাবে এই পরিবারের মধ্যে এমন এক হার্দিক প্রাণশক্তি নিয়ে বিকশিত হয়েছিল যে ভাইবোনদের বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের সমাজজীবনে তাঁদের অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ, যেমন শহীদ মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী অথবা ফেরদৌসী মজুমদার স্বয়ং স্পর্শ করেছেন কৃতি ও খ্যাতির শীর্ষ। আত্মজীবনী রচনার বড় মাপের আয়োজন নিয়ে নয়, আপন জীবন ও শিল্পীসত্তার প্রতিফলন ঘটানোর আগ্রহ থেকে নয়, নিছকই ফেলে আসা জীবনের হাসি-আনন দুঃখ-বেদনার নিবিড় পরিচয় তুলে ধরার তাগিদ থেকে ফেরদৌসী মজুমদার বলেছেন তাঁর পরিবারের মানুষজন বাবা-মা ও ভাইনবোনদের কথা, সকলে মিলে এক ছাদের নিচে জীবনের আনন্দগান গাইবার কথা। কিন্তু এক আশ্চর্য যাদুকাঠির ছোঁয়ায় এইসব সামান্য কথা হয়ে উঠেছে অসামান্য কথকতা, আটপৌরে অন্তরঙ্গ স্মৃতিকথা আমাদের হৃদয়কে যেমন আপ্লুত করে, রসবোধে উজ্জীবীত করে, তেমনি বাংলার পারিবারিক জীবনের এমন এক শক্তিময়তার পরিচয় তুলে ধরে যা বিকশিত হয়ে বাংলা জীবনকেই যুগিয়েছিল সমৃদ্ধি, কখনো বড়মাপের সামাজিক পরিসরে, কখনো-বা একান্ত ঘরোয়া পরিমণ্ডলে। সেই অসাধারণ পারিবারিক কথকতা কী সাধারণভাবেই-না বলে গেছেন ফেরদৌসী মজুমদার, উপহার দিয়েছেন এমন এক গ্রন্থ যা পরমভাবে সুখপাঠ্য, নিবিড়ভাবে উপভোগ্য এবং সেইসঙ্গে গভীরতর জীবনোপলব্ধির প্রকাশক।
ফেরদৌসী মজুমদার জন্ম ১৮ জুন ১৯৪৩। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ও আরবিতে এমএ। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন শিক্ষকতাকে । বর্তমানে সানবিমস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা। ৫০ বছর ধরে মঞ্চ ও টেলিভিশনে অগণিত নাটকে তার নানা ধরনের স্মরণীয় চরিত্রচিত্রণ এখনাে দর্শকের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। অভিনয় করেছেন দেশের বাইরে ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরে । অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে লাভ করেছেন একুশে পদক, জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলাে আজীবন সম্মাননা এবং ডেইলি স্টার আজীবন। সম্মাননাসহ দেশি-বিদেশি নানা পুরস্কার ও সম্মাননা। বাংলা একাডেমি তাকে দিয়েছে। সম্মানসূচক ফেলােশিপ। স্বামী রামেন্দু মজুমদার ও একমাত্র সন্তান ত্রপা মজুমদার নাটকের জগতে স্বকীর্তিতে উজ্জ্বল।