ফ্ল্যাপে লিখা কথা সহজ কথা যায় না লেখা সহজে -এ রকম কথা তো কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ বলেই গেছেন। অথচ ছোটদের জন্যে লেখা সহজ না হলে চলবে কেন? ছোটরা কি ভারী ভারী গুরুগম্ভীর লেখা পড়বে? দু-এক পাতা উল্টেপাল্টে দেখে ঠোঁট উল্টিয়ে পাশে সরিয়ে রাখবে। তবে ভাগ্য ভালো । সবাই জানেন, শিশুকিশোর-পাঠ্য রচনার জন্য খ্যাতি আছে বিশেষ একজনের। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা কারণেই তাঁকে চেনেন। তিনি হায়াৎ মাহমুদ। মুখ্যত তিনি বড়োদের লেখক। কিন্তু এক আশ্চার্যের ব্যাপার ,ছোটদের জন্য লিখতে বসলে তিনি তাদের যেন সমবয়সী হয়ে যান। তাঁর লেখা বই -রবীন্দ্রনাথ ,নজরুল, জসীম উদ্দীনকে নিয়ে কিশোরপাঠ্য জীবনী গ্রন্থ পাঠকমহলে সকলের মন কেড়েছে। এ বইটিতে স্বদেশ ও বিদেশের মোট তেরোজন কবি-ব্যক্তিত্বকে নিয়ে অল্প পরিসরে জীবনী পরিবেশন করা হয়েছে। কিশোর বয়সীদের আনন্দ দেবে, প্রয়োজনও মেটাবে।
ভূমিকা বয়স যখন সত্তুর পার হয়ে গেছে, এই বার্ধক্যে ভাবতে মন চায় -জীবনী রচনায় আমার সম্ভবত কোনো এক ধরনের স্বভাবজাত স্ফুর্তি আছে। তাই যদি না হবে তো, ছোটদের জন্যে ও বড়োদের উদ্দেশ্যে এত ক’টা জীবনীগ্রন্থ লেখা সম্ভব হয়ে উঠল কী করে? ‘রবীন্দ্রনাথ : কিশোর জীবনী’ লেখায় যে হাতেখড়ি হয় তার প্রণোদনা শক্তি ছিলেন হাবীব ভাই-শিশু সাহিত্যিক কবি হাবীবুর রহমান ,অকালে গত হয়েছে বহুকাল আগে। তখন আমার বয়স হবে বড়ো জোর চব্বিশ/পঁচিশ । সেই শুরু। ‘নজরুল: কিশোর জীবনী’ লিখতে হয় বাংলা একাডেমীর তৎকালীন সর্বেসর্বা কবি মনজুরে মওলার বড়ো আত্যন্তিক অনুরোধে; তাকে সশ্রদ্ধ চিত্তে ধন্যবাদ জানাই এই সুযোগে। এ দুটোই ছিল বড়ো কাজ, অর্থ্যাৎ কিশোরপাঠ্য পূর্ণায়তন জীবনীগ্রন্থ। পরে প্রকাশক ও লেখক বন্ধু মফিদুল হকের তাগিদে ক্ষীণ কলেবরে গুটি কয়েক জীবনী রচনা করতে হয়। তখন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে নিয়ে সংক্ষিপ্তাকারে জীবনকথা লিখে ফেলি। ‘লালন সাঁই’ লিখি বাংলাদেশের শিশু একাডেমীর ইচ্ছা পূরণে। ‘পল্লীকবি জসীম উদ্দীন’ প্রথম মুদ্রিত হয়েছিল ভারতবর্ষের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে, অক্ষর পাবলিকেশনসের স্বত্বাধিকার শুভব্রত দেব প্রকাশ করেছিলেন। তাঁতে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। এইভাবে , নানা কারণে, নানা উপলক্ষে ,কিশোপাঠ্য ক্ষুদ্রায়ন জীবনীগ্রন্থগুলো ক্রমে ক্রমে লেখা হয়ে উঠে। এখন সব গুলো একত্রিত করে প্রকাশিত হল। আমার মনে মধ্যে উদ্দীষ্ট পাঠক পাঠিকা কিন্তু বড়োরা নয়,ছো্টরাই। বয়স্ক পাঠকবর্গ আমার এ অভিপ্রায় স্মরণে রাখলে আমার প্রতি সুবিচার করা হবে। সকলের কল্যাণ হোক। সকলকেই কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জানাই। হায়াৎ মামুদ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১০২/এ, দীননাথ সেন রোড গেণ্ডারিয়া, ঢাকা-১২০৪
হায়াৎ মামুদের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার মৌড়া নামে আখ্যাত এক গ্রামে, ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১৭ আষাঢ় (২রা জুলাই ১৯৩৯) তারিখে । ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অভিঘাতে মানসিকভাবে বিপর্যন্ত পিতার হাত ধরে চলে আসতে হয় ঢাকা শহরে । অদ্যাবধি সেখানেই বসবাস । স্কুল-কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন এ শহরেই। পিএইচ. ডি. ডিগ্রি তুলনামূলক সাহিত্যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, প্ৰায় প্রৌঢ় বয়সে। রুশ ভাষা অল্পবিস্তর জানেন, অনুবাদের চাকরি করেছেন প্ৰগতি প্ৰকাশনে, মস্কোয়-সুদূর ও স্বপ্রিল সোভিয়েত ইউনিয়নে বসে । দেশের অভ্যন্তরে চাকরি সর্বদাই শিক্ষকতার-প্ৰথমে কলেজে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে । বর্তমানে অবসর-জীবন যাপন করছেন। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন শিশুসাহিত্যে । দেশ-বিদেশের সারস্বত সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ আছে । সমালোচনা, ছাত্রপাঠ্য বই ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ষাটেরও বেশি।