কুয়াশাজড়ানো ভোরে থরথর করে কাঁপতে থাকা দিয়াকে দেখে বিহান নিজের গায়ের চাদরটা তার গায়ে ভালোভাবে জড়িয়ে দিলো। সুন্দর মিষ্টি একটা ঘ্রাণ বের হচ্ছে সেটা থেকে। দেখতেও খুব সুন্দর! দিয়া অবাক হয়ে তাকাল বিহানের দিকে, চোখ দুটো যেন বিস্ময়ে ভরা! থমথমে গম্ভীর রাগী মানুষটা যে কোনো মেয়েকে নিজের গায়ের চাদরে জড়াবে তা কল্পনা করাও ভুল ছিলো কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত দিয়ার কাছে, কিন্তু আজ সব নিয়মের অনিয়ম করে তাই হলো! দিয়ার বিস্ময় চাহনি দেখে সে বেশ কিছুক্ষণ ভাবুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, 'চাদরটা আমার বউয়ের জন্য কিনেছিলাম, কিন্তু আজ তোকে দিয়ে দিলাম। যত্ন করে রাখিস আর ভালোবাসার জিনিস খুব যত্নে আগলে রাখতে হয় জানিস তো?' তাসরিফ আহমেদ বিহান, একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। যার জীবনের বেশীরভাগ সময় ব্যয় হয়েছে লেখাপড়ার পেছনে, এর আগে পিছে তাকিয়ে দেখেনি। যে বয়সে একজন তরুণ যুবক রোজ নতুন করে প্রেমে পড়ে, সে বয়সে বিহান মেয়েদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। পরিবারের সবার ধারণা তার মতো রাগী, গম্ভীর, থমথমে বদমেজাজী ছেলে, যে কখনো কোনো মেয়ের সংস্পর্শে যায়নি তার দ্বারা প্রেম বা বিয়ে কিছুই হবেনা। কিন্তু সবার চোখের আড়ালে মনেমনে তার বিপরীত চরিত্রের চঞ্চলা, হাসিখুশি, পড়ালেখায় অমনোযোগী আড্ডাপ্রিয় দিয়াকে ভয়ানকভাবে ভালোবেসে ফেলে। যে ভালোবাসা দিন দিন গভীর থেকে গভীর হতে থাকে আর তার জীবনে অসুখের মতো হয়ে যায়। তার আশেপাশে কাউকে দেখলে সে ভয়ানকভাবে রেগে যায়। রাত নেই দিন নেই হুটহাট ঢাকা থেকে উন্মাদের মতো ফিরে আসে তার প্রিয় শহর নড়াইলে শুধু প্রিয় অসুখ নামক প্রিয় মানুষটির মুখ একবার দেখার জন্যে! এত বেশি ভালোবাসার পরেও বিহান একটা সময় দিয়াকে ফিরিয়ে দেয়, ঠিক হয়ে থাকা বিয়ে ভেঙে দেয় অথচ এই বিয়ের জন্যেই সে কত বেশি পাগল ছিলো! দিয়ার পরিবার অপমানিত হয়ে তার বিয়ে অন্যত্র ঠিক করে। সে একা ঘরে কেঁদে মরে, বিষাদ যন্ত্রণায় কাতর মনে প্রশ্ন জাগে, তার বিহান ভাই কেন এই বিয়েটা ভেঙে দিলো, কেন তাকে ফিরিয়ে দিলো, আদৌ কি সে কোনোদিন জানতে পারবে আর বিহানও কি তার বিয়ে অন্য কারো সাথে হতে দিবে!