মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধার দানে-আত্মদানে এদেশ। কিন্তু প্রাণভয়ে ভিটেমাটি ছাড়া উন্মুল-উদ্বাস্তুদের অবদানও কম নয়। সেই দুঃসহ বেদনার উদ্বাস্তু জীবনের জীবনলগ্ন কথা আছে চমৎকার শিরোনামের ''কাহিনি: যুদ্ধের নয় জীবনের'' এই বইতে। লেখক তাপস মজুমদার যুদ্ধের কথা এড়িয়ে তার/তাদের উদ্বাস্তু হওয়া, আবার মুক্তিযুদ্ধের শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরার জীবন কাহিনি লিখেছেন। এই বই পড়া মানে ওই দুর্দান্ত-দুঃসময়ের কিছু মানুষের জীবনকে যেন নিকট থেকে অবলোকন করা। সাদামাটা চোখে নয়, যেন এক বিরল অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে এখানে জীবনের পর্যবেক্ষণ। চরিত্র চিত্রণে কথাসাহিত্যের দক্ষতাও লক্ষণীয়। পড়তে পড়তে মাঝে মধ্যে মনে হয়েছে যেন উপন্যাস পড়ছি; আর অধ্যায়ের শিরোনামগুলো বেশ কাব্যিক।
লেখকের লেখায় কিছু বৈশিষ্ট্য আকর্ষণীয়। এক, চরিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিরল পারঙ্গমতা। আমার বিশ্বাস, পাঠক প্রত্যেক চরিত্রকে আপন করে নেবেন। তাদেরকে ভালোবাসবেন। দুই, শুধু মানব-চরিত্র নয়, পশু-চরিত্র চিত্রণেও লেখকের আন্তরিকতা দক্ষতার পর্যায়ে উন্নীত। প্রসঙ্গক্রমে লেখকের পশুপ্রেম লক্ষণীয়; মানবপ্রেম তো আছেই। তিন, লেখক যেন নিজের অজান্তেই মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সংক্রান্ত অনেক প্রাসঙ্গিক তথ্য তুলে এনেছেন। চার, শুধু উদ্বাস্তু-স্মৃতিকথা নয়, মুক্তিযুদ্ধের অনেক কথাই আছে এই বইতে।
মুক্তিযুদ্ধের উদ্বাস্তু-সাহিত্য আছে। এমন সাহিত্যে বইটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বইটি মুক্তিযুদ্ধ- অনুসন্ধিৎসু পাঠকের অবশ্য পাঠ্য।
প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ইতিহাসবিদ এবং বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক