"বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লক্ষ্য ও সংগ্রাম" বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ বঙ্গবন্ধুর জীবনকে বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ থেকে কোনভাবেই আলাদা করে দেখার কোন সুযােগ নেই। তাই স্বাধীন বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির বিকাশের অব্যাহত সংগ্রাম ও ধারার মধ্যেও বঙ্গবন্ধু অবিচ্ছেদ্য। তার উপস্থিতি সব সময়ই প্রয়ােজন হবে। তাই শুধু অতীত বা বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ গড়ার সংগ্রামেও বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম, সংগ্রাম, লক্ষ্য ও আদর্শ জীবন্ত উপাদান হয়ে থাকবে। তাই এই বইয়ে যা লেখা হয়েছে তা শেষ কথা নয়, চলমান সংগ্রামে প্রতিনিয়তই বঙ্গবন্ধু বারবার ফিরে আসবেন। এই বইয়ে যতটুকুই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে তা বঙ্গবন্ধুকে আরও জানার এবং তাঁর জীবন ও সংগ্রাম থেকে অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনা নেওয়ার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে আগ্রহী করে তােলার লক্ষ্যে। দ্বিতীয় সংস্করণে বিরাট একটি অধ্যায় যােগ করা হয়েছে, যাকে পরিশিষ্ট বললে যথাযথ হবে না। আমাদের জাতির শত্রুরা বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ও প্রকৃত অবস্থান এবং আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সঠিক তথ্যকে বিকৃত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সব সময়ই বিভ্রান্তির মধ্যে রাখার অপচেষ্টা খুবই সচেতন ও সূক্ষ্মভাবে অব্যাহত রেখেছে। আমাদের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অনেক উপাদান ও দলিল সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে। যারা সব সময় এত কিছু ঘেঁটে গভীরে যেতে চান না, অথবা সে রকম সুযােগ থাকে না, তারা আমাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বিভিন্ন দিক এবং আমাদের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র আন্দোলনের গৌরবময় সংগ্রামের ইতিহাস জানতে আগ্রহী, তারা কমপক্ষে প্রতীকী কিছু দলিল বা তথ্য জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা যাতে কোন প্রয়ােজনে এবং নিজেদের সন্তুষ্টির জন্য সে রকম প্রতীকী কিছু দলিল ও তথ্য সহজেই পেতে পারেন সেকথা মনে রেখে এই বইয়ে সেরকম কিছু দলিল ও তথ্য সংযুক্ত করা হল। এগুলাে বাংলাদেশের ছাত্রজনতার সংগ্রামের ইতিহাসের উপাদান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং আমাদের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র আন্দোলন; কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের লড়াই এবং আমাদের দেশের সকল গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল শক্তির সকল সংগ্রামই ছিল একই মূল স্রোতধারায় পরিচালিত। কোন কিছুই আলাদা করে নয়, বাঙালি জাতির সকল মহৎ সংগ্রাম এবং সাফল্য ও অর্জনকে ভিত্তি করেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এই বইয়ের নতুন সংস্করণের পরিশিষ্ট অংশে কিছু ঐতিহাসিক দলিল প্রথম অংশের নিবন্ধগুলাের সমর্থনে এবং আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে পাঠকদের কোন কাজে লাগবে, এই প্রত্যাশা নিয়ে তুলে ধরা হল। দলিলগুলাে আমাদের জাতির ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের দলিল সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এখানে সীমিত কিছু দলিল প্রতীক হিসেবে ছাপানাে হল। আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই আগ্রহ ন্যূনতম কিছুটা জাগ্রত হলে এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণামনস্ক তরুণরা এই সকল বিষয়ে সঠিক তথ্যগুলাে বের করে আনার জন্য তাগিদ অনুভব করলে আমাদের উদ্দেশ্য সফল ও সার্থক হয়েছে মনে করে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করব। আমাদের অতীতের গৌরবময় বীরত্বপূর্ণ লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ অগ্রগতি ও মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে বিকশিত করার ভিত্তি। বঙ্গবন্ধুর জীবন, আদর্শ, লক্ষ্য ও সংগ্রাম এবং আমাদের জাতির সকল মহৎ সংগ্রাম ত্যাগ ও সাফল্য এবং ঐতিহ্য-ইতিহাস সবই আমাদের জাতির সম্পদ এবং ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, লক্ষ্য ও সগ্রামকে আমাদের দেশ এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার কোন সংগ্রাম থেকেই আলাদা করা যায় না। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, লক্ষ্য ও সংগ্রামের সঙ্গে আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও দলিলপত্র খুবই প্রাসঙ্গিক। আশা করি, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের সঙ্গে পাঠকেরা দলিলগুলাের প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাবেন। সেই সঙ্গে সঠিক ইতিহাস এবং ইতিহাসের দলিলপত্র সম্পর্কে তাঁরা আরও আগ্রহী হবেন। নুরুল ইসলাম নাহিদ ১৭ই মার্চ ২০০৯
নুরুল ইসলাম নাহিদ ১৯৪৫ সালে ৫ জুলাই সিলেট জেলায় বিয়ানীবাজার উপজেলার কসবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার পঞ্চখণ্ড হরগােবিন্দ হাই স্কুল, সিলেট এমসি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। তার রয়েছে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি সকল মহলে স্বীকৃত। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ও মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে তাঁর গৌরবােজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। সালে সিলেট জেলার গােলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা (সিলেট-৬) থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০৮ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হিসেবে নুরুল ইসলাম নাহিদ জাতীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা পরিষদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট জাতীয় শিশু পরিষদ, শিশু কল্যাণ ট্রাষ্ট জাতীয় প্রেস কাউন্সিল প্রভৃতি বহু প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে সদস্য মনােনীত হয়েছিলেন । তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।