পত্রশিল্পী রবীন্দ্রনাথের রাণু : রাণুর রবীন্দ্রনাথ রাণুর মৃত্যুর পর কবির হৃদয় ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। শূন্য হৃদয়ে আর একটা রাণুর জন্য কবি ব্যাকুল হয়েছিলেন। কবির প্রিয় ঋতু বর্ষার আকাশে ঝরা মেঘের মাঝে আর এক রাণু এসে উপস্থিত, কবিকে শোবার ঘরে আহ্বান জানিয়ে। কবির দাড়ির ফাঁকে ফাঁকে জেগে ওঠে স্নেহের ঝংকার। কে এই রাণু ? কত বয়েস? কী তার পরিচয়? এ সব ম্লান হয়ে যায় শুধু নামটা পড়ে। কবি ব্যাকুল হয়ে ওঠেন—আবার ফিরে এসেছে রাণু! রাণুর চিঠির উত্তর কবি যথাসম্ভব দেন। কারণ চিঠির উত্তর না দেওয়াটা তিনি মনে করতেন অসভ্যতা। চিঠি দেওয়া নেওয়ার মধ্যে কবির সঙ্গে রাণুর একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাণু কবির হৃদয়ে চেপে বসেন, একটা আলগা বাতাস ওঠে আনাচে কানাচে। বৃদ্ধ বয়সে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে প্রেমের জোয়ার উঠল। সাতান্ন বছরের যৌবনে রাণুর স্পর্শ কবিকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল একুশ বাইশে। কিন্তু মানুষের ধারণা ভুল। গুজবের মধ্যে কোথাও সত্যতা নেই। কবির দেহে যৌবন আসেনি। এসেছিল কবিত্বের যৌবন । কবির হৃদয়ে বেজে উঠেছিল—‘আমার অভিমানের বদলে আজ নেব তোমার মালা/আজ নিশিশেষে শেষ করে দিই চোখের জলের পালা'—কবি-কন্যা বেলার একটা শীর্ণ হাত ধরে যখন কবির অশ্রু গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছিল সে সময় কবি দুঃখের বহিঃপ্রকাশে দুঃখের পবিত্রতা নষ্ট হতে দেননি। কবি এগিয়ে গেছেন। কবি সান্ত্বনার জায়গা তৈরি করেছেন। কবি মনের ভিতর অনেক মন তৈরি করতে পারতেন। তাই যখন একটা মনে অশান্তি আসত তখন অন্য একটা মনে ডুবে যেতেন। হতাশা কাটানোর, দুঃখের পাহাড় ডিঙানোর এটাই তো বড় পথ