ভূমিকা কুরুক্ষেত্র-যুদ্ধারম্ভের উভয়পক্ষে যোদ্ধারূপে আত্মীয় স্বজনকে দেখিয়া শোকাকুল-চিত্তে অৰ্জ্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলিলেন— সামান্য রাজ্যসুখ ভোগের নিমিত্ত.স্বজনগণকে বধ করিতে ইচ্ছা করি না। যে স্বজন-পরিবৃত হইয়া রাজ্যসুখ উপভোগ করিব, তাহারা সকলেই এই যুদ্ধে বিনাশ হইলে আমার রাজ্যে প্রয়োজন কি? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাহাকে নানাশাস্ত্র যুক্তি দ্বারা বুঝাইয়া দেন যে, তুমি ভুল বুঝিয়াছ—আত্মা বিনষ্ট হয় না। আত্মা নিত্য, স্থিতিশীল, অবিনাশী। সংসার কৰ্ম্মময়, স্বকর্ম্মানুরূপ কর্ম্মানুষ্ঠান করাই মানুষের প্রধান কর্ম্ম। এরূপ বহুবিধ | শাস্ত্রসম্মত মীমাংসা দ্বারা অৰ্জ্জুনের ভ্রম সংশোধন করেন। এইসব বিষয়গুলি লইয়া অৰ্জ্জুনের প্রশ্ন ও ভগবানের উত্তররূপে শ্রীমদ্ভগবদগীতা রচিত। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ভক্তবৃন্দকে বলিয়াছিলেন—রাধাকৃষ্ণ আর গীতা, এই দুইয়ের ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন নাই—যেমন আছে তেমনই থাক। অর্থাৎ গীতার শ্লোকগুলির সরলভাবে যে অর্থ হয় তাহাই ঠিক। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের টীকাকারগণ স্ব-স্ব মতানুযায়ী গীতার নানারূপ জটিল | ব্যাখ্যা করিয়াছেন। এ হেতু দার্শনিক তত্ত্বের নানাবিধ স্ফুরণ হইয়াছে, কিন্তু | ইহার ফলে সর্ব্বসাধারণের ইহা দুর্ব্বোধ্য হইয়া পড়িয়াছে। আমরা আমাদের গীতায় জটিলতা পরিত্যাগপুর্ব্বক মূল সংস্কৃত শ্লোকের সরলার্থ সন্নিবেশ করিয়া সাধারণের সহজবোধ্য করিবার চেষ্টা করিয়াছি। গীতার প্রতিপাদ্য বিষয় কি? ইহা লইয়া জ্ঞানিগণের মধ্যে নানারূপ | মতভেদ আছে—কেহ বলেন কৰ্ম্মযোগ, কেহ বলেন জ্ঞানযোগ, কেহ বলেন ভক্তিযোগ। “নিয়তং কুরু কর্ম্ম ত্বং কর্ম্ম জ্যায়ো হ্যকৰ্ম্মণঃ।” “ন হি জ্ঞানেন | সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে।” কৌন্তেয় প্রতিজানীহি ন মে ভক্তঃ প্রণশ্যতি” | ইত্যাদি শ্লোকে সন্দেহের ছেদ হয় না। আমাদের মতে ভগবানে সমাহিত-চিত্ত হইয়া তাঁহার দাসরূপে স্বধর্ম্মানুরূপ কৰ্ম্ম নিষ্পন্ন করাই সংসারে ভগবৎপ্রাপ্তির একমাত্র উপায়। ইহাই গীতার অর্থ।