মাওলা সূফী সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী(আঃ) এঁর ছোট ছোট প্রবন্ধগুলো একত্রি করণের প্রয়াসমাত্র এই “প্রবন্ধ সংকলন”। প্রবন্ধগুলো হারিয়ে যাওয়ার ভয় থেকেই অধিকাংশ প্রবন্ধ একত্র করে ২০১০ সালে পাঠকদের সুবিধার্থে সর্বপ্রথম “প্রবন্ধ সংকলন” নামে গ্রন্থটি ছাপানো হয়। বর্তমানেও পাঠকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই মাওলার সবগুলো প্রবন্ধ একসাথে সন্নিবেশ করে “প্রবন্ধ সংকলন” নামেই তিনটি খণ্ডে ছাপানো হল। কোরবানী, মসজিদ দর্শন এবং সিয়াম দর্শন এই তিনটি প্রবন্ধের সমন্বয়ে “প্রবন্ধ সংকলন প্রথম খণ্ডে” প্রকাশ করা হলো। পশু জবাই করে মাংস ভক্ষণ করা কোরবানী নয়। বরং আমিত্বের তথা চিত্তবৃত্তির উৎসর্গের নাম কোরবানী। ধনী-নির্ধন সকলের জন্যই কোরবানী অবশ্য করণীয় কর্তব্য। ঠিক সেইরূপ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকার নাম সিয়াম নয়। আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টার নাম সিয়াম। সিয়ামের মাধ্যমেই মানুষের আত্মপরিচয় ঘটে এবং সিয়ামের পুরষ্কার আল্লাহ স্বয়ং। س ج د = سِجْدَ (সেজদা) এবং م س ج د = مَسْجِدْ(মসজিদ)। সেজদার স্থানকে মসজিদ বলে। সেজদা এবং মসজিদ পরিপূরক। নীতিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ছাড়া মসজিদ প্রতিষ্ঠার অধিকার কাহারো নাই। হাক্বীকি মসজিদই প্রকৃত মসজিদ। মানুষের আপন দেহঘরে রবের জাগরণেই প্রকৃত মসজিদ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। রসুলাল্লাহ (সাঃ) আবু আমের কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদকে জেরার মসজিদ ঘোষণা করিয়া ভেঙে ফেলেন (মসজিদে জেরার অর্থ দুঃখ উৎপাদনকারী মসজিদ)। আল্লাহ ও তাঁহার রসুলের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত নয় এবং মোমিন ইমাম দ্বারা পরিচালিত নয়, এমন সকল মসজিদই জেরার যা ভেঙে ফেলার নিদর্শন রসুল (আঃ) নিজেই রেখেছেন। প্রবন্ধ সংকলনের এই খণ্ডে মোহাম্মদী আদর্শের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো যেমন কোরবানী, মসজিদ, এবং সিয়ামের হাক্বীকত মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এবং মানসিকতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধর্মীয় জীবন-যাপনকারীদের জন্য মোহাম্মদী ইসলামের আধ্যাত্মিক উন্নয়নে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মসজিদের আদর্শ, কোরবানীর ত্যাগ এবং সিয়ামের সংযম দ্বারা আল্লাহতে ফানা হওয়া সম্ভব।