সরদার ফজলুল করিম (1925-2014) অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর সাক্ষাৎকারের বিশেষত্ব হলো প্রশ্ন-কর্তার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে, যুক্তির ম্যারাপ্যাচে তাকেই বিদ্ধ করেন। জর্জরিত প্রশ্ন-কর্তাকে তিনি যদি কিন্তু হয়তো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। তাঁর সাক্ষাৎকার জুড়ে রয়েছে দার্শনিকতা ও প্রজ্ঞা। দীর্ঘ এক যুগ ধরে তাঁর সঙ্গে কথোপথন ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ভিন্ন এক সরদারকে আবিষ্কারের নির্যাস গ্রন্থটি। এ গ্রন্থ তাঁর জীবন-আলেখ্য। স্কুল-বন্ধু মোজাম্মেল শরৎ চন্দ্রের নিষিদ্ধ উপন্যাস পথে দাবী তাঁকে পড়তে দেন। সেখানেই তিনি নতুন জীবনের সন্ধান পান। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে তিনি বাম রাজনীতির সংস্পর্শে এলেও মূলত বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে সরাসরি যুক্ত হন রাজনীতির সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা চাকরি থেকে পদত্যাগ করে কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক কাজ শুরু করেন। নরসিংদির চালাকচরে আন্ডাগ্রাউন্ডে থেকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে যান কলকাতা, সেখানে পুলিশের নজরে পড়েন, কিন্তু কৌশলে গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হন। রাজনৈতিক কারণে পাকিস্তান সরকারের বিরাগভাজন হয়ে প্রায় এগারো বছর জেল খেটেছেন। 1971 সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে গ্রেফতার করে পুরনো বিমানবন্দর এলাকার একটি ঘরে রাখেন। সেখানে তাঁকে দেখে পাকিস্তানি এক মেজর ব্যাঘ্রের মতো গর্জে উঠে বলেন, ইউ, দি বাস্টার্ড সান অব তাজউদ্দীন। উই শ্যাল টিচ ইউ এ গুড লেসন। তিনি ছিলেন অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের শিষ্য। নলিনী দাস, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান-এর সঙ্গে তিনি ছিলেন গভীরভাবে সম্পর্কিত। সক্রেটিস, প্লেটো, এ্যারিস্টটল, রুশোর জ্ঞানতত্বের সঙ্গে তিনি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। গ্রন্থে মায়ের হাতে মরিচ পোড়া দিয়ে ভাত খাওয়া, কোষা নৌকায় করে স্কুলে যাওয়া সহ কয়েক দশকের জীবনচিত্র পাওয়া যাবে। জানা যাবে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং 2007 সালের জরুরি আইন সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ। হিন্দু-মুসলিম প্রশ্নে তিনি নিজেকে মানুষ বলে অভিহিত করেছেন। একজন সমাজ-বিপ্লবী হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন আমরা কিভাবে বিপ্লবের মধ্যে বাস করছি। প্রেম সম্পর্কে তাঁর গভীর অনুভূতি করেছেন প্রকাশ। তিনি জবাব দিয়েছেন রাজনীতি, প্রচলিত শিক্ষা-ব্যবস্থা, দ্বিখন্ডিত ভারতবর্ষ, জীবনবোধ, বইপড়া, জ্ঞান-তত্ব, মানুষ কাকে বলে এবং বিশ্ব দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সহ অসংখ্য প্রশ্নের। এ সাক্ষাৎকার গ্রন্থে আমরা জানতে পারব আমাদের অনন্য এক সরদার ভাইকে।
Title
সরদার ফজুলল করিমের সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর সংলাপ একজন জীবনশিক্ষকের খোঁজে
মােহাম্মদ আলী : লেখক, প্রবন্ধকার, কবি ও গবেষক। তাঁর জন্ম ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার অন্তর্গত কাতলাগাড়ির কীর্তিনগর গ্রামে ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬০। পিতা : রমজান আলী, মা : সুফিয়া খাতুন। স্কুলজীবন থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন। ইতােমধ্যেই লিখেছেন দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক প্রথম আলাে, আমাদের সময়, আজকের কাগজ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ভােরের কাগজ, দৈনিক সমকাল, আবহমান সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। '৮০-এর দশকে বামপন্থি ছাত্র-রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। স্বৈরাচার এরশাদবিরােধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ছাত্র-রাজনীতির পাশাপাশি ভূমিহীন কৃষকদের সংগঠিত করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হন। তিনি কর্নেল তাহের সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক এবং বিজ্ঞানচেতনা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক। প্রকাশিত গ্রন্থ : বিপ্লব ও প্রেমের প্রবচনগুচ্ছ (২০০৬), হুমায়ুন আজাদের একগুচ্ছ সাক্ষাঙ্কার (২০০৭), ভাষাসংগ্রামী আব্দুল মতিন (বাংলা একাডেমি, ২০১১), হুমায়ুন আজাদ (বাংলা একাডেমি, ২০১৪), একজন জীবনশিক্ষকের খোঁজে (২০১৮)। সম্পাদিগ্রন্থ : আরজ আলী মাতুব্বর : চিন্তাজগৎ (২০০৭) সম্পাদক : দুঃসাহস (ছােটকাগজ)।