ফ্ল্যাপে লেখা কথা এ কিন্তু মানুষ ভঙ্গি নিয়ে ভোলানো নয়, কবিতার গুনে দূরের মানুষকে কাছে টানা। সমসাময়িকদের মধ্যে যে কাজ আর কেউ পারে না ,সুকান্ত একা তা করেছে-আধুনিক বাংলা কবিতার দ্বারা বহুজনের জন্য সে খুলে দিয়ে গেছে। কবিতাবিমুখ পাঠকদের কবিতার রাজ্যে জয় করে আনার কৃতিত্ব সুকান্তর। তারই সুফল আজ আমরা ভোগ করছি। ---সুভাষ মুখোপাধ্যায়
আশায় ছিলাম সে ঢাকায় আসবে । অনেক কথ হবে। কিন্তু সে আসতে পারেনি। মৃত্যুর কথা তার সমস্ত কবিতায় অসহনীয় শৃঙ্খলের মতো পরিব্যপ্ত। এই শৃঙ্খলকে ভাঙবার কথা সে ঘোষনা করেছে বারংবার এবং বিশেষ করে ‘ছাড়পত্র’ কবিতায় নতুন মানবশিশুর স্পর্ধিত কান্নার মধ্য দিয়ে । সে মৃত্যুঞ্জয় জীবনের বাণীকে অদ্ভুত করে রেখে গিয়েছে আগামী যুগ যুগান্তরের জন্যে। মৃত্যু সুকান্তকে মারতে গিয়েছে, কিন্তু আমাদের বুকে রেখে গিয়েছে সে অসহ্য আক্ষেপ। সে ঢাকায় আসতে পারেনি। কিন্তু তাঁর সমগ্র কবিতার মধ্য দিয়ে আমরা তার বক্তব্য বুঝতে চেষ্টা করবো এবং তাঁকে পাবো। ---রণেশ দাশগুপ্ত
সূচিপত্র * নিবেদন : আবু নাহিদ * ভূমিকা: বদরুদ্দীন উমর * স্মৃতিচারণ: এক ঝলক দেখেছিলাম: রণেশ দাশগুপ্ত * ছাড়পত্র * ঘুম নেই * পূর্বাভাস * গীতিগুচ্ছ * মিঠেকড়া * অভিযান * হরতাল * পত্রগুচ্ছ * অপ্রচলিত রচনা * গল্প * প্রবন্ধ * গান * কবিতা * পরিশিষ্ট: এক * পরিশিষ্ট: দুই * জীবনপঞ্জি * গ্রন্থপঞ্জি * প্রথম ছত্রের সূচি * কবিতার বর্ণানুক্রমিক সূচি * গল্পের বর্ণানুক্রমিক সূচি * প্রবন্ধ * সঙ্গীত: বর্ণানুক্রমিক সূচি
বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি। ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-নিবারন ভট্টাচার্য, মা-সুনীতি দেবী। মাতামহের ৪৩, মহিম হালদার স্ট্রীটের বাড়ীতে,কালীঘাট,কলকাতায় তার জন্ম।। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার, বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার, উনশিয়া গ্রামে। এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম। বেলেঘাটা দেশবন্ধ স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুনাচল বসু। সুকান্ত সমগ্রতে লেখা সুকান্তের চিঠিগুলির বেশিরভাগই অরুনাচল বসুকে লেখা। অরুনাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্রস্নেহে দেখতেন। সুকান্তের ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাকে সেই অভাব কিছুটা পুরন করে দিতেন। কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়ীটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভাতুষ্পুত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। একাধারে বিপ্লবী ও স্বাধীনতার আপোসহীন সংগ্রামী কবি সুকান্ত ছিলেন কমুনিষ্ট পার্টির সারাক্ষণের কর্মী। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে নিজের শরীরের উপর যে অত্যাচারটুকু তিনি করলেন তাতে তাঁর শরীরে প্রথম ম্যালেরিয়া ও পরে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৩ই মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলিকাতার ১১৯ লাউডট ট্রিষ্ট্রের রেড এড কিওর হোমে মৃত্যুবরণ করেন। সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন মাত্র মাত্র ২১ বছরের আর লেখালেখি করেন মাত্র ৬/৭ বছর। সামান্য এই সময়ে নিজেকে মানুষের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাঁর রচনা পরিসরের দিক থেকে স্বল্প অথচ তা ব্যাপ্তির দিক থেকে সুদূরপ্রসারী।