হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের পাটগাতী ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শিশুকাল থেকেই ছিলেন জনদরদী। শিশু মুজিব দরিদ্র ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষা প্রদানের জন্য নিজ পরিবারসহ পাড়া প্রতিবেশী থেকে চাল সংগ্রহ করতেন। তিনি অনেক ছাত্রের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত অসংখ্যবার কারাবরণ করেছেন। তিনি নিজ আদর্শ এবং দেশের মানুষের কল্যাণের ব্রত থেকে সরে যাননি কখনও। আলোচ্য গ্রন্থটিতে ১৮ জন লেখকের লেখা নিয়ে রচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জীবনের কারাজীবন নিয়েই মূলত লেখাগুলো সম্পাদনা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবন থেকেই বাংলার সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করেন। বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কষ্ট যন্ত্রণায় তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। ফলে এই অধিকারহারা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সেই স্কুলজীবন থেকেই সোচ্চার ছিলেন। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবনের অত্যন্ত মূল্যবান সময় তাঁকে কারাগারের অন্ধকার প্রকষ্ঠোই কাটাতে হয়। পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করলেও তিনি সুকৌশলে এগিয়েছেন কাক্সিক্ষত স্বাধীনতার দিকে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর ওপর আক্রমণ হতে পারে– ভারত, কানাডাসহ বহু দেশ থেকে এমন সতর্কবার্তা দেয়া হলেও বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করেছিলেন তাঁর অফিসারদের; তিনি বলেছিলেন, সবাই তাঁর সন্তান, তারা এমন কাজ করতে পারে না। তিনি আরও বলেছিলেন– প্রাণের ভয়ে তিনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেবেন না। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঝুঁকির কথা জেনেও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি। এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ।
লেখক, গবেষক জাহাঙ্গীর আলম সরকার জন্মসূত্রে নীলফামারীর ভূমিপুত্র। ১৯৭৮ সালের ২৯ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। নীলফামারী সরকারি কলেজ এবং কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি শিক্ষা অর্জন করেন। লেখালেখির শুরু শৈশব থেকেই। ছাত্রজীবনেই প্রকাশিত হয় বেশকিছু লেখা। শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখার সাথে যুক্ত রয়েছেন। নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সম্মানিত সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকার পেশাগত জীবনে একজন ব্যাস্ত আইনজীবী। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবৎ আইন চর্চায় ব্রত রয়েছেন। ওকালতি জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি আইন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি বেশকিছু গ্রন্থ প্রকাশ করেন। গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এবং যৌতুক নিরোধ আইন (২০১৮), নারী ও শিশু আইনের ভাষ্য (২০২১), দ্রুত বিচার আইনের ভাষ্য (২০২১), ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্স (২০২২)। আইন ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবেই গবেষণা করে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমী থেকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় নীলফামারীর ইতিহাস, যা তাঁর নিজের জেলার হাজার বছরের ইতিহাস। শুরুর দিকে তিনি কাব্য চর্চা করতেন। ২০১৩ সালে অন্ধকার পথে জল-কাদার সং নামে তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। একই বছর প্রকাশিত হয় কালোত্তীর্ণ হুমায়ূন আহমেদ নামে একটি জীবনী গ্রন্থ। পরের বছর ২০১৪ সালে আমার নিবন্ধ আমার বন্ধু নামে প্রকাশিত হয় একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। ছোটদের জন্য তিনি গল্প রচনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- গল্পে কথায় বঙ্গবন্ধু (২০২০) এবং বঙ্গবন্ধুর গল্প (২০২১)। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচ.ডি গবেষক হিসেবে গবেষণারত রয়েছেন। ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : নীলফামারী অঞ্চল’- বিষয়ে তিনি গবেষণা করছেন। এ যাবৎ তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধ, কাব্য, আঞ্চলিক ইতিহাস, গল্প ও আইন বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ মুজিব হত্যাকা-ের ইতিবৃত্ত (২০২০), বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সংবিধান লঙ্ঘন প্রসঙ্গ (২০২১), শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ (২০২২), বঙ্গবন্ধু: কারাজীবন (২০২২)। এ অবধি তাঁর ২৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) কর্তৃক প্রদত্ত মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০০৯ অর্জন করেছেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার সার্ধশতবার্ষিকী স্মারক সম্মাননা ২০১৮।