বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. এবনে গোলাম সামাদ গত ১৫ আগস্ট ২০২১ আমাদের ছেড়ে চিরকালের জন্য চলে গিয়েছেন। তাঁর এই বিদায়কে অকালমৃত্যু বলা যায় না, কারণ তিনি বেঁচেছিলেন ৯২ বছর (জন্ম ২৯ ডিসেম্বর, ১৯২৯), যা আমাদের গড়পরতা বয়সের চেয়ে অনেকটাই বেশি। কিন্তু শেষ বয়সেও তিনি যে-রকম সৃষ্টিশীল ছিলেন সেটা বিবেচনায় নিলে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, তাঁর আরো কিছুকাল বেঁচে থাকা দরকার ছিল। কিন্তু তা আর হবার নয়। এখন আমরা কেবলই তাঁকে স্মরণ করতে পারি, তিনি যে চিন্তা-কর্ম, তথ্যরাশি ও জ্ঞান রেখে গেছেন আমরা তার চর্চা করতে পারি। ড. সামাদ এক বহুমাত্রিক ও বিস্ময়কর প্রতিভা। বিচিত্র বিষয় নিয়ে তিনি জ্ঞান চর্চা করেছেন এবং সে সব নিয়ে এমন সব লেখা লিখেছেন যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পণ্ডিতদেরও বিস্মিত করেছে। তাঁর নিজের লেখাপড়া ও একাডেমিক গবেষণার বিষয় ছিল উদ্ভিদবিজ্ঞান, এ বিষয়ে তিনি মূল্যবান বই লিখেছেন। পাশাপাশি লিখেছেন শিল্পকলা ও নৃতত্ত্ব নিয়ে আকর গ্রন্থ। ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম, সমাজবিজ্ঞান, কৃষি, প্রভৃতি বিষয়েও তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ছিল ঈর্ষণীয়। এ সকল বিষয়ে তিনি যেসব গ্রন্থ, প্রবন্ধ ও কলাম লিখেছেন তা অনেক নতুন তথ্য, বিশ্লেষণ ও বয়ানে ঋদ্ধ। আড়ালে পড়ে থাকা অনেক ঐতিহাসিক সত্যকে তিনি সামনে এনেছেন, অনেক অর্ধসত্য, ভুল তথ্য ও একপাক্ষিক ধারনাকে চিহ্নিত করেছেন। বিরূপ পরিস্থিতির ভয়ে তিনি কখনো সত্য উচ্চারণে কুণ্ঠিত হননি। পক্ষপাত কখনো তাঁকে সত্যব্রত ও বাস্তবতাবোধ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। একজন বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাবিদ হিসেবে এখানেই তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। জাতির যে কোনো ছোট-বড় সংকটে তিনি নির্দ্বিধায় তাঁর তথ্য ও যুক্তিনির্ভর গভীর বিশ্লেষণ ও দিকনির্দেশনা উপস্থাপন করেছেন। তাঁর এই বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ এই জ্ঞানতাপসকে সম্মান জানানো জাতীয় কর্তব্য। জাতির এই দায়কে বিবেচনায় রেখে আমরা এই স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এবনে গোলাম সামাদ এমন এক সমাজের বাসিন্দা যে সমাজে তাঁকে ধারণ করার মত লোকের সংখ্যা যথেষ্ট নয়। সেটি আমরা বিশেষভাবে টের পেয়েছি এই কাজ হাতে নিয়ে। তাঁর মত, পথ ও অবদান নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করার মতো লেখক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবু আমরা চেষ্টা করেছি এবনে গোলাম সামাদের নানামুখী প্রতিভাকে বিশ্লেষণ করতে। এ ব্যাপারে আমাদের সীমাবদ্ধতা সহজেই অনুমেয়। তবুও আল্লাহপাকের শুকরিয়া যে আমরা কিছুটা হলেও তাঁকে সম্মান জানাতে পারলাম, সচেতন পাঠক ও চিন্তাশীল মানুষদের সামনে এবনে গোলাম সামাদের পরিচিতি ও মূল্যায়ন হাজির করতে পারলাম। আমরা আশা করি এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে এবনে গোলাম সামাদকে জানা-বোঝা ও চর্চা করার পথ প্রশস্ত হবে। দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি, এ ধরনের কাজে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাওয়া যায় না। তাই কাজ সম্পন্ন করতে অনেক দেরি হয়ে গেল। আমরা প্রথমেই ধন্যবাদ জানাতে চাই সম্মানিত লেখকদের যাদের সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ করা সম্ভবই ছিল না। এছাড়া যারা নেপথ্যে থেকে আমাদের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়ে সাহায্য করেছেন আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।