যুগচাহিদার সহজলভ্যতায় আমরা হয়ে উঠেছি জীবনের প্রতি কঠোর অবিচারী। সময়ের পালাবদলে উপনীত হয়েছি শেষ জমানার কালো গহ্বরের কিনারে। অতলান্তিক অন্ধকারের মহাকর্ষ বল সবাইকে টেনে ধরেছে। মানবতা আজ সংকটাপন্ন। এর থেকে বাঁচার একটি উপায় : উজ্জীবিত প্রাণে রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা, তার সুন্নতের অমিয়ধারায় আপ্লুত হয়ে জীবন পুণ্য করা। রাসুলের সুন্নত মানবতার জীবনচাবি—যার থেকে পাওয়া যায় মহিমান্বিত জীবনের দিশা। মানুষের ভালোবাসা পৃথিবীর ফুসফুস। রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিখাদ ভালোবাসায় বিপন্ন মানবতাকে দিয়েছেন মহাসত্যের সঞ্জীবনী। খোদায়ি অভিধা রহমাতুল্লিল আলামিন-এর অনন্য অধিকারী তিনি। যে তোমার প্রতি উঁচিয়ে ধরে ঘৃণার খরধার তরবারি, তুমি তার দিকে বাড়িয়ে দাও ভালোবাসার স্নিগ্ধ গোলাপ—এই ছিল তার উসওয়া, প্রোজ্জ্বল আদর্শ। এরকম আদর্শিক সৌন্দর্য, অলৌকিক বিভূতি ও ঐকান্তিক বরাভয়ে ভরপুর তার সিরাত—মহাকাব্যিক জীবনগাথা। প্রখ্যাত মুসলিম মনীষী, ইতিহাসবেত্তা, সাহিত্যিক সাইয়েদ সুলাইমান নদবি রহ.-এর সিরাতে রহমতে আলম বইটি সিরাতে রাসুলের ওপর এক অনবদ্য রচনা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম জীবনেতিহাস সুনিপুণ দক্ষতায় তিনি তুলে ধরেছেন এই বইয়ে। উপমহাদেশে অভূতপূর্ব পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে তার বইটি। বর্তমান যুগচাহিদার প্রেক্ষাপটে বইটির বাংলা-অনুবাদ করেছেন প্রতিভাধর, মননশীল লেখক আলমগীর মুরতাজা। বাংলাভাষী পাঠকদের জন্য বইটি প্রকাশ করেছে সময়ের আলোচিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পুনরায় প্রকাশন। আমি বইটির বহুল প্রচারণা ও সকলের পাঠোদ্দীপনা কামনা করছি। সিরাতের প্রাণবন্ত পাঠে জীবন হোক পুণ্যময়। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মুজিব হাসান, গদ্যকার
ভারত-উপমহাদেশে সিরাতচর্চা, ইতিহাস ও আরবিভাষার সাহিত্য নিয়ে যারা গবেষণামূলক কাজ করেছেন, কর্মগুণে হয়েছেন বিশ্ববরেণ্য—সাইয়েদ সুলাইমান নদবি রহ. তাদের সবচেয়ে অগ্রসারির। ১৮৮৪ সালে ব্রিটিশ-ভারতের বিহারের দিসনাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিশ্ববিখ্যাত নদওয়াতে পড়াশোনা করে সেখানেই দীর্ঘ দিন আরবিভাষার পাঠদান করেন এই প্রাজ্ঞ প্রতিভাধর; পাশাপাশি ছিলেন আন-নদওয়া আরবি পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক। কর্মজীবনে শিক্ষকতা ও সম্পাদনার পাশাপাশি লিখেছেন অসংখ্য কালজয়ী গ্রন্থ, প্রদান করেছেন পৃথিবীখ্যাত সিরাত-বিষয়ক ভাষণ—খুতুবাতে মাদরাজ নামে যা বিশ্ববিখ্যাত। সিরাতুন নবি (যুগ্ম), সিরাতে আয়েশা, আরদুল কুরআন, খৈয়ামসহ যা-ই তিনি লিখেছেন, সেটিকেই করে তুলেছেন পাঠ-অনিবার্য। এসব আকরগ্রন্থ তাকে এনে দিয়েছে অমরত্বের মর্যাদা। তার লেখা ইতিহাসের পাণ্ডুলিপিগুলো শাস্ত্রীয় সংজ্ঞা পার হয়ে হৃদয়কেও স্পর্শ করে প্রবলভাবে।