মার্টিন লিংস কৃত মুহাম্মদের জীবনী অন্য লেখকদের থেকে ভিন্নরকমভাবে লিখিত হয়েছে অষ্টম ও নবম শতাব্দীর আরবীয় সূত্রসমূহের উপর ভিত্তি করে। (যেগুলো থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রথমবারের মতো এখানেই ইংরেজীতে অনুবাদ করে তুলে ধরা হয়েছে।) এতে সতেজ বক্তব্য ও সততাযুক্ত স্বীকারোক্তি ফুটে উঠেছে ঐসব ব্যক্তির, যারা মুহাম্মদকে কথা বলতে শুনেছেন এবং তাঁর জীবনের ঘটনাবলী চাক্ষুষ করেছেন।
ধারাবর্ণনার অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী লিংস এমন এক রচনাশৈলী গ্রহণ করেছেন, যার মাধ্যমে তাঁর বইয়ে তিনি যে কাহিনী বলতে চেয়েছেন তাতে সাদামাটা ভাব এবং চমৎকারীত্ব উভয়ই ফুটে ওঠেছে। প্রথমবারের মতো গৃহীত সেসব দৃষ্টিভঙ্গির কারণে লিংসের এই বই প্রশংসিত ও উপভোগ্য হবে তাদেরও, মুহাম্মদের জীবনী যাদের জানা আছে।
মার্টিন লিংস অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজী ও আরবীতে ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। বারো বছর তিনি কায়রো ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার ছিলেন, প্রধানতঃ শেক্সপিয়ার বিষয়ে। তিনি কাজ করেছেন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রাচ্য পাÐুলিপি’র কীপার হিসাবে, ওয়ার্ল্ড অব ইসলাম ফেস্টিভাল ট্রাস্ট’র কন্সালটেন্ট হিসাবে এবং ‘দ্য আর্টস অব ইসলাম’ প্রদর্শনীতে আর্টস কাউন্সিল কমিটি’র সদস্য হিসাবে। ১৯৭৭ সালে কিং আব্দাল আজিজ ইউনিভার্সিটি’র আমন্ত্রণে তিনি মক্কায় অনুষ্ঠিত ইসলামী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।
বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত ইসলামী মরমিবাদ বিষয়ে তাঁর তিনটি কাজ ছাড়াও তিনি দ্য সিক্রেট অব শেক্সপিয়ার, এনসিয়েন্ট বিলীফ এন্ড মডার্ণ সুপারস্টিশনস (প্রাচীন বিশ্বাস এবং আধুনিক কুসংস্কার), কবিতা এবং ক্যালিগ্রাফি ও পাÐুলিপি অলঙ্করণে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা ক্বুরআনিক শিল্পকলা’র দুইটি ভলিউমের লেখক। তিনি স্ট্যাডিজ ইন কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন এবং দ্য ইসলামিক কোয়ার্টারলি’র জন্য অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখার পাশাপাশি দ্য নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলামিক ফর এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’র জন্যও লিখেছেন।
মার্টিন লিংগস (জানুয়ারী ২৪, ১৯০৯ - মে ১২, ২০০৫)। একজন নওমুসলিম। ইসলামি নাম আবু বক্কর সিরাজুদ্দিন। তিনি একজন পশ্চিমা লেখক, শিক্ষাবিদ ও ফ্রিটজফ শুয়ানের শিষ্য ও শেক্সপিয়র বিষয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মোহাম্মদ: হিজ লাইফ বেইসড অন দ্যা আর্লিয়ার সোর্স (Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources) বইয়ের লেখক হিসাবেই সমধিক পরিচিত। বইটি ১৯৮৩ সালে প্রথম প্রকাশ পায় এবং অদ্যাবধি মুদ্রিত হয়ে চলেছে। বইটির জন্য পাকিস্তান ও মিশর সরকার থেকে পুরস্কার লাভ করেন। ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত সীরাত সম্মেলনে তার এ গ্রন্থটি ইংরেজিতে লিখিত নবীর শ্রেষ্ঠ জীবনী হিসাবে বিশেষ মর্যাদায় প্রশংসিত হয়েছে। তিনি ম্যানচেস্টারের বুরনেইজে একটি প্রোটেষ্ট্যান্ট পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন পর্যন্ত যথাক্রমে ক্লিফটন কলেজ, ম্যাগডালেন কলেজ এবং অক্সফোর্ডে পড়াশুনা করেন। তারপর লিখুয়্যানিয়ার ভিয়্যাউতাস ম্যাগনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন ইংরেজি ভাষা- এ্যাংলো এবং আধুনিক ও পুরাতনের মধ্যবর্তী ইংরেজি ভাষার রুপ মিড্যাল ইংলিশ (Middle English) অধ্যায়ন করেন। কায়রোতে এক যুগের অধিক সময় বসবাস কালে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষার শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন এবং শেকসপিয়ার বিরচিত নাটকের বাৎসরিক পরিবেশনার আয়োজন করতে থাকেন। ১৯৪০ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার একটি বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লস। মৃত্যুর কিয়দকাল পূর্বে এ বিষয়ে দেওয়া একটি সাক্ষৎকার তার মৃত্যুর পর ‘শেক্সপিয়ার্স স্পীরিচ্যুয়ালিটি: এ পারস্পেকটিভ, এ্যান ইন্টারভিউ উইথ মার্টিন লিংগস’ নামে চলচিত্রের রুপ লাভ করে।