খ্রিষ্টপূর্ব চার দশকে টলেমি (Ptolemy) ও দিওদোরাসের (Deodorus) বর্ণনায় ‘গঙ্গারিডই’ নানা উত্থান-পতন ও সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে আজকের বাংলাদেশ। এদেশটি মহাকালের পরিক্রমায় বিভিন্ন জাতির শাসন ও শোষণের শিকার হয় এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ‘বাংলাদেশ’ এর অভ্যূদয় ঘটে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত্রে পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্য, ইপিআর, পুলিশসহ ছাত্র-জনতা এ প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতির অধীনে ১০ নং সেক্টরে নৌকমান্ডোরা যুদ্ধ করেন। মূলত এটি একটি সুসাইডাল স্কোয়াড, যা মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্প হতে বাছাই করা সাহসী যুবকদের নিয়ে গঠিত। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ফ্রান্সের তুলোঁ বন্দরের পাকিস্তানি সাবমেরিন ‘ম্যানগ্রো’ থেকে পালিয়ে নয়জন নাবিকও ভারতে আশ্রয় নেয় এবং নৌকমান্ডো বাহিনীতে যোগদান করেন। ভারতীয় নৌবাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গের পলাশীতে ‘সি-২-পি’ ক্যাম্পে নৌকমান্ডো বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ভারতীয় নৌকমান্ডো শর্ম্মার পরিকল্পনায় ‘লিমপেট মাইন’ এর মাধ্যমে জাহাজ, গানবোট, পল্টুন, বয়া প্রভৃতি ধ্বংস করাই এ বাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে নেতৃত্ব, পর্যাপ্ত ট্রেনিং ও অস্ত্রের অভাবে সুপ্রশিক্ষিত পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। পাকিস্তান সরকার বহির্বিশ্বে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অবস্থা স্বাভাবিক বলে প্রচার করতে থাকে। কিন্তু আত্মঘাতী নৌকমান্ডোদের ‘অপারেশন জ্যাকপট’ মুক্তিযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট। বহির্বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা দ্রুত প্রচার পায়। শত্রু বাহিনীর মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়। নৌকমান্ডোদের দুঃসাহসিক অভিযানে শত্রুবাহিনীর সৈন্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ, খাদ্য ও রসদ সরবরাহ লাইন ভেঙে পড়ে। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের সমুদ্র বন্দর ও নদী বন্দরসমূহ কার্যত অচল হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরূপ পরিস্থিতিতে শত্রু বাহিনীর পশ্চাৎপসারণ অর্থাৎ Back up খরহব ভেঙে পড়ে। ফলে পাকিস্তান বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমান গ্রন্থটি এসব বিষয়ে মৌলিক গবেষণার ফসল।