জারিগান বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিশেষ এক সঙ্গীতরীতি হলেও এর মুদ্রিত ও সুবিন্যস্ত কোনও সংকলন কোথাও পাওয়া যায় না। এই শূন্যতা পূরণককল্পে আমরা ধারারাবাহিক ছয়খ-ে ‘কারবালার জারিগান মর্সিয়া’ নামক সিরিজ গ্রন্থমালা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথমখ-টি প্রকাশিত হলো কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের প্রখ্যাত সুফি আবদুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুল করিম প্রকাশ আলাই মিয়া শাহ্ সাহেব কর্তৃক তিনশ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী হাবেলি সাহেব বাড়ি দরবারের সংগ্রহভা-ারকে ভিত্তি করে। ফার্সি ভাষায় ‘জারি’ শব্দের অর্থ হলো শোক। আবার আরবি ‘মর্সিয়া’ শব্দের অর্থও শোক। কারবালাকেন্দ্রিক শোকগাথাই মর্সিয়া সাহিত্য পদবাচ্য। মোগল শাসনামলের (১৫৭৫-১৭৫৭ খ্রি.) আগেই বাংলা সাহিত্যে মর্সিয়ার উদ্ভব হলেও মোগল শাসনামলে তা ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে। মোগল শাসনামলকে তাই বাংলা মর্সিয়া সাহিত্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়। মহররম মাসে কারবালা প্রান্তরে নবীবংশের মহান ইমাম হযরত ইমাম হোসাইনসহ আহলে বাইতে মোস্তফার ধারক-বাহকদের অন্যায়যুদ্ধের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যার বিয়োগান্তক ঘটনাক্রম থেকেই মূলত এই গানের উদ্ভব ঘটেছে। সতেরশ শতক থেকেই বাংলায় এই গানের ধারা সূচিত হয় মহতী চিশতিয়া সুফিগণের প্রবর্তনায়। ইসলামের ইতিহাসভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারার সর্বাধিক জনপ্রিয় পরিবেশনারীতি হচ্ছে জারিগান। শহীদ ইমাম হাসান, ইমাম হোসাইন ও আহলে বাইতে রসুলের অন্যান্য মহতীচরিত্রের অন্তর্গত বেদনা বিষাদ নিয়ে সকরুণ আহাজারিমূলক সুরে সাধারণত তাল নৃত্য সহযোগে জারিগান পরিবেশিত হয়ে থাকে। এক সময় সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে জারিগানের প্রচলন ছিল। বর্তমানে এ ধরনের নাট্য পরিবেশনার প্রচলন পূর্বের চেয়ে কিছুটা কমে গেলেও তা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায় নি।