হযরত দেওয়ান আহাম্মদ রেজা (কুদ্দুসুল্লাহু সিরহুল আজিজ) ওরফে পাগলা দেওয়ান সাব তাঁদের অন্যতম। ‘পাগলা দেওয়ান সাব’ নামের তাসাউফগত তাৎপর্য রয়েছে। ইশকে এলাহি বা আল্লাহপ্রেমে বিভোর এমন একজন সংসারত্যাগী আল্লাহর ফকির, যিনি বাহ্যজ্ঞান রহিত হয়ে বেখুদির পর্যায়ে চলে গেছেন; সাধারণ মানুষের চোখে তাঁকে পাগল বলেই মনে হয়। আবার কামালিয়াত হাসেল হবার পর যখন বেলায়েতের ফায়েজ বর্ষিত হয়, কারামত বা মাজেজার প্রকাশ ঘটে তখন মানুষ তাঁকে ‘আল্লাহর অলি’ বলে স্বীকার করে নেয় শ্রদ্ধায় মাথানত করে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। এমনিভাবে অলিয়ে কামেল হযরত দেওয়ান আহাম্মদ রেজা (কু.সি.) সর্বসাধারণ্যে অভিহিত হন ‘পাগলা দেওয়ান সাব’ বলে। এই মজ্জুব আল্লাহ প্রেমিক মহাসাধক ইশকে এলাহির দুর্বার আকর্ষণে বিশাল ভূখ-ের জমিদারী ত্যাগ করে এক কাপড়ে কপর্দকহীন অবস্থায় বেরিয়ে পড়েছিলেন বেলায়েতের পথে, আল্লাহ পাকের দিদার লাভের উদ্দেশ্যে। নিরুদ্দিষ্ট অবস্থায় কঠোর রিয়াজত বা আধ্যত্মিক সাধনায় মগ্ন ছিলেন প্রায় বার থেকে চৌদ্দ বছর। সেই সময়কালে যে তিনি কোথায় কোথায় ছিলেন তার কিছুই জানা যায়নি। কেবল এইটুকু জানা যায়, উনার আম্মা হুজুরের প্রশ্নের উত্তরে তিনি একদা জানিয়েছিলেন, “আমি এমন জায়গায় ছিলাম যেখানে বাঘের শ্বাস আমার গায়ে এসে লাগত”। এই আধ্যাত্মিক মহাসাধক মজ্জুব অলি হযরত দেওয়ান আহাম্মদ রেজা (কু.সি.) জন্মগ্রহণ করেন বাংলা ১২৫৭ সনের প্রথম ভাগে ভাগলপুর দেওয়ান বাড়িতে। কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর পৌরসভার অন্তর্গত ভাগলপুরে দেওয়ান বাড়ি অবস্থিত। দেশবরেণ্য বাংলার কিংবদন্তীর অপরাজেয় নির্ভীক সেনানী দেওয়ান ঈশা খাঁর অধঃস্তন পঞ্চমপুরুষ দেওয়ান আদম খাঁ ভাগলপুর দেওয়ান বাড়ির প্রতিষ্ঠাপুরুষ। ভাগলপুর দেওয়ান বাড়ি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের ধারক-বাহক নয়, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক বাহকও বটে। দেওয়ান বাড়ির সম্মুখে অবস্থিত বিখ্যাত ঐতিহাসিক দেওয়ান বাড়িজামে মসজিদ। উক্ত মসজিদ নির্মাণ করেছেন দেওয়ান ঈশা খাঁর অধঃস্তন পুরুষ দেওয়ান গউস খান। ফারসি ভাষায় লিখিত মসজিদটির প্রাচীন শিলালিপির বঙ্গানুবাদ হলো: “এই মসজিদ তৈরি হলো গউস দোর শাহ্ আলীর উপর শুভদৃষ্টির আশায়। নাম ও নির্মাণকালের তারিখ ১১০৩ হিজরি”। প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের প্রাচীন মসজিদ ধারণ করে আছে দুষ্প্রাপ্য মোঘলবংশীয় ও সেনবংশীয় স্থাপত্যশিল্পের অপূর্ব সংমিশ্রণ। মসজিদ গাত্রে খচিত সূক্ষ্ম কারুকার্য্য অনিন্দ্য নয়নাভিরাম। ঐতিহাসিক দেওয়ান বাড়ি জামে মসজিদ বাংলাদেশ প্রতœতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণ আইন মোতাবেক সংরক্ষণ করা অবশ্য বাঞ্চনীয়। কিন্তু “কার গোহালে কে ধোঁয়া দেয়? সব দেখি তা না না না”!