পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে সমাজ সংস্কার আন্দোলনে সবচেয়ে বড় সহায়ক হ’ল ‘শিক্ষাব্যবস্থা’। গোলামী যুগে ইংরেজরা ঠিক এখানেই হাত দিয়েছিল। তারা তাদের শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিল এই মর্মে যে, এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ রক্তে-মাংসে ভারতীয় থাকলেও মন-মানসিকতায় হবে ইংরেজ’। সেই লক্ষ্যে তারা প্রথমে শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘সাধারণ শিক্ষা’ ও ‘ইসলামী শিক্ষা’ নামে দু’টি ধারায় ভাগ করে। অতঃপর সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে তারা ইসলামকে মুক্ত করে। যদিও মাধ্যমিক পর্যায়ে ইসলামের যৎসামান্য শিক্ষা বজায় রাখে। অতঃপর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৭ শিক্ষাবর্ষে নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্রদের জন্য লিখিত বাংলাদেশ স্কুল টেক্ষ্ট বুক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইসলাম ধর্ম শিক্ষা’ বইয়ের ১১৫ পৃষ্ঠায় ‘মযহাবের পার্থক্যের কারণ’ শীর্ষক আলোচনার শেষ দিকে ‘আহলেহাদীছ’ সম্পর্কে বলা হয়, ‘কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কেয়াসের অনুসারী মুসলমানদিগকে সুন্নী বা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত বলা হয়। উলে−খিত চারিটি মযহাব (হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী) কেয়াস ও রায় অর্থাৎ যুক্তি ও ব্যক্তিগত অভিমতের যথেষ্ট সাহায্য লওয়া হইয়াছে বলিয়া কিছুসংখ্যক ফকীহ ঐ সকল মযহাবের এই দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করেন এবং হাদীসের উপর অধিকতর নির্ভরশীল মত প্রকাশ করেন। ফলে সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে ‘আহলুল-হাদীস’ নামে পঞ্চম আর একটি দলের উদ্ভব হয়। এই দলের ইমামের নাম ইয়াহইয়া ইবনে আক্ছাম (মৃ. ২৪২ হি.) ও দাঊদ ইবনে আলী ইসফাহানী’। অতঃপর অনুশীলনীতে প্রশ্ন রাখা হয়, আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত কাহারা? আহলুল হাদীসের সাথে তাঁহাদের বিভেদ কিসের?’ এতে ইঙ্গিতে বুঝানো হ’ল যেন আহলেহাদীছরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বহির্ভূত কোন দল। অতএব তাদের সঙ্গে বিভেদ বা বিরোধটা কি, সেটাই এখন ঐ নবীন শিক্ষার্থীকে কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হবে। যাদের মাথায় এখনো আহলেহাদীছ-হানাফীর কোন চিন্তাই ঢোকেনি.......
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।