সৃষ্টিজগতের ভর কেন্দ্র হ’ল ‘তাওহীদ’। একইভাবে ইসলামের মূল হ’ল ‘তাওহীদ’। তাওহীদ অর্থالْإِعْتِقَادُ بِأَنَّ اللهَ وَاحِدٌ لاَشَرِيْكَ لَهُ আল্লাহ এক, তাঁর কোন শরীক নেই, একথা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা। তিনিই আদি, তিনিই অন্ত, তিনি স্থায়ী ও চিরঞ্জীব। তিনিই রূযীদাতা, তিনিই পালনকর্তা, তিনি বিধানদাতা ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। তিনি ব্যতীত অন্য কেউই আমাদের শর্তহীন আনুগত্য ও উপাসনা পাবার যোগ্য নয়। তিনি ব্যতীত অন্য কারু দরবারে মানুষের উন্নত মস্তক অবনত হবেনা। আল্লাহর দাসত্বের অধীনে সকল মানুষের অধিকার সমান। এই সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র হ’ল ‘তাওহীদ’। যা মানুষকে সকল প্রকারের গোলামী হ’তে মুক্ত করে এবং শুধুমাত্র আল্লাহর গোলামীর মাধ্যমে সত্যিকারের স্বাধীন মানুষে পরিণত করে। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ মানুষকে তাওহীদের প্রতি আহবান জানিয়ে গেছেন। এই দাওয়াত পৃথিবীর যেখানেই পৌঁছেছে, সেখানেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে মানবতার দুশমনদের মধ্যে হৃৎকম্পন শুরু হয়েছে। সাথে সাথে তাওহীদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। ইব্রাহীম (আঃ)-এর বিরুদ্ধে নমরূদের শত্রুতা, মূসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধে ফেরাঊনের অভিযান, ঈসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধে তৎকালীন সম্রাটের হত্যা প্রচেষ্টা, শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে গোটা আরবের কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর সম্মিলিত উত্থান- এ সবকিছুই আমাদেরকে উপরোক্ত কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। বলা বাহুল্য যে, মানব জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যই নবীদের আগমন ঘটেছিল। এক্ষণে তাওহীদ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানের পূর্বে আমরা তাওহীদের পটভূমি সম্পর্কে কিছু আলোচনা করতে চাই।-
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।