বাংলাসাহিত্যের অন্যতম উপন্যাস “আম আটির ভেপু”। এই উপন্যাসের মুল চরিত্র হচ্ছে অপু । তাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে পুরো উপন্যাস । এই উপন্যাসে অপু ও তার দিদি হচ্ছে সব কিছুর মুল । যদিও অপুকেই কেন্দ্রিয় চরিত্র ধরা হয় । অপুর বেড়ে ওঠা নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে । এখানে তার ও তার দিদির শৈশব কেটেছে । তাদের ছুটে বেড়ানো, গ্রামের বনভোজন, ঝড়ের মধ্যে আম কুড়ানো । এছাড়া যাত্রা পালা, ও অবাধ আনন্দের ছুটে বেড়ানো গ্রামময় । যা হয়ত শহরের বেড়া ওঠা ছেলে মেয়েরা চিন্তাও করতে পারবে না । আমের আটি দিয়ে যে বাশি বানানো যায় সেটাও হয়ত তারা কখনও ভাবেনি । এই সরলতা ও গ্রামের জীবন ফুটে উঠেছে উপন্যাসে । এরপর অপুর চরিত্র আসলে গড়ে উঠেছে এক বিস্ময়কর ভাবে । বলা যায় তার চোখে সব সময় কৌতুহল খেলা করে থাকে । অপর দিকে তার দিদি হচ্ছে প্রকৃতির একটা অংশ। তারা দু ভাই বোন মিলে ঘুরে বেড়ায় গ্রাম । অপু সব জায়গাতেই বিস্ময় খোজে । তার কাছে সব কিছু নতুন, এক শিশুর কাছে পৃথিবী যেমন ঠিক তেমন । তার চোখেও কষ্টে কেদে ওঠে আবার আনন্দে হেসে ওঠে । বলা যায় অপুর চরিত্রে আমরা এক শৈশব দেখতে পাই । অপর দিকে সেই সময়ের সমাজ বা গ্রাম ব্যবস্থার বর্ননা রয়েছে দারুন ভাবে । বলা যায় সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থাকে বিভূতিভূষন যেন নিজে থেকে দেখেছেন । যদিও “আম আঁটির ভেঁপু” উপন্যাসটি “পথের পাচালী” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। তবুও বইটিতে দারুন ভাবে অপুর শৈশব ফুটে উঠেছে।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচনার মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হৃদয়। শুধু উপন্যাসই নয়, এর পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন বিভিন্ন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, দিনলিপি ইত্যাদি। প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল যশোর জেলায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রথম বিভাগে এনট্রান্স ও আইএ পাশ করার মাধ্যমে। এমনকি তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপশি তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'পথের পাঁচালী', যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার মাধ্যমে। এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় অর্জন করেছেন অশেষ সম্মাননা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই এর মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো 'আরণ্যক', 'অপরাজিত', 'ইছামতি', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল', 'দেবযান' ইত্যাদি উপন্যাস, এবং 'মৌরীফুল', 'কিন্নর দল', 'মেঘমল্লার' ইত্যাদি গল্পসংকলন। ১০ খণ্ডে সমাপ্ত ‘বিভূতি রচনাবলী’ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র, যেখানে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে তার যাবতীয় রচনাবলী। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর 'রবীন্দ্র পুরস্কারে' ভূষিত হন।