এশীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সৌম্যেন্দু রায় প্রথম আলোকচিত্রশিল্পী, যিনি সিনেমার রঙ সম্পূর্ণ বাস্তবধর্মী করতে পেরেছিলেন। রঙের বাস্তবতা কী? ধরা যাক, কোনো দৃশ্যে পাশাপাশি দুজন বসে আছেন। একজনের গায়ের রঙ শ্যামলা। অন্যজন ফরসা। সৌম্যেন্দু—যুগ শুরু হবার আগে, কালো আর ফরসা মানুষের রঙের পার্থক্যটা ঠিকভাবে ধরা পড়তো না। দুজনেই হয়ে যেতেন গোলাপির কাছাকাছি। কেন যে এই অঘটন বার বার ঘটত—সেটা বোঝা দুষ্কর। সৌম্যেন্দু রায় রঙিন আলোকচিত্রে হাত দেবার সঙ্গে—সঙ্গেই রঙিন ছবি হয়ে গেল সম্পূর্ণ বাস্তব। কালো মানুষ কালো হলেন। ফরসা রইলেন ফরসা। সেটা ১৯৭২। শ্রাবণ মাসে সৌম্যেন্দু শুরু করলেন সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ ছবির শুটিং। তাঁর ক্যামেরায় ধরা পড়ল বাংলার কালো মেঘের ছায়া। রোদ ঝলমলে নদীতে স্নানের আনন্দ। গোধূলির গভীর বিষাদ। এবং বাঙালির গায়ের রঙের অনন্ত বৈচিত্র্য। এমন ফোটোগ্রাফি আগে দেখেনি পৃথিবীর মানুষ। কিন্তু কীভাবে তিনি যন্ত্র—নির্ভর আলোকচিত্রকে উত্তীর্ণ করলেন রেমব্রান্ট, ভ্যানগঘ, রেনোয়া, বা অবনীন্দ্রনাথের চিত্রকলার পরম উৎকর্ষে? সৌম্যেন্দু রায় বলেন—শুধুই যন্ত্র নয়, হৃদয় দিয়ে আলোকে অনুভব করেন তিনি। এই অনুভবের রহস্য উদ্ঘাটিত হল বইটিতে।