ভূমিকা যাদের সম্পর্কে আজ বলব তারা সবাই এই সমাজের মূল স্রোতেরই অংশ। আমরা তাদের চিনেও চিনতে পারি না। দেখেও না দেখার ভান করি। তারা কোনো অংশে কারুর থেকে কম নয়, বরং বেশিরকম মানবিক। বন্ধুর স্বচ্ছল হাতখানি ওরা ধরতে চায়। আমাদের অকৃপণ ভালোবাসার হাতটি ওদের দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে। এরা হল জড়বোধ, মানস বিকল কিংবা বিশেষ বা স্বতন্ত্র আমার আপনারই সন্তান। প্রতিবেশী, বাড়ির ছেলেমেয়ে । এখনও দেখি সমাজে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ‘প্রতিবন্ধকতা’ (disability) সম্পর্কে সম্যক ধারণা তো গড়ে ওঠেইনি বরং এইসব শিশুদের ‘পাগল’, ‘মাথা খারাপ’, ‘পূর্বজন্মের দোষ/পাপ' এ জাতীয় মন্তব্য বাবা-মায়ের প্রায়শই শুনতে হয়। তাদের কানও তৈরি হয়ে গেছে। কেউ আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না, কারণ তারা জেনে গেছেন এটাই স্বাভাবিক। এই দেশটির নাম ভারতবর্ষ। অথচ বড়ো দুর্ভাগ্যের বিষয় হল বাড়িতে, আত্মীয়-পরিজন কিংবা সমাজের কাছে ভুল তথ্যটি পরিবেশিত হয়ে আসছে। সন্তানটি ‘বিশেষ কিংবা ‘জড়বুদ্ধি’ হওয়ার মূলে বাবা, মা কিংবা সন্তানটি কোনো ভাবে দায়ী নয়। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতার প্রয়োজন হয় বই কি। চিকিৎসার গাফিলতি, জন্মের প্রাক্কালে শিশুটির মস্তিষ্ক যাতে কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া বংশগতি (জিন ফ্যাক্টর), জন্মের প্রাক্কালে কিংবা ভ্রূণাবস্থায় বাচ্চাটি মস্তিষ্কে আঘাতের দরুণ স্নায়ুকোষ পূর্ণমাত্রায় নষ্ট হলে,অক্সিজেনের অভাব হলে – জড়বুদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় । এই কথাটা জানা খুবই জরুরি। আজকাল চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নতির দরুন ‘স্টেমসেল থেরাপি’ কিংবা কিছু বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আগাম সতর্কতা নেওয়া সম্ভব। অবশ্য সেক্ষেত্রে প্রসূতি কিংবা গর্ভস্থ সন্তানের অবস্থা, অন্যান্য পারিপার্শ্বিক কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে। ত্রুটি নিয়ে জন্মাবার পর এখনও পর্যন্ত কোনো ওষুধ বা চিকিৎসা আসেনি যাতে তাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। কারণ অটিজম, মালটিপল ডিসএবিলিটিজ, সেরিব্রালপালসি, অ্যাসপারজার সিনড্রোম ইত্যাদি সবই একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা (Permanent condition)। আর এগুলো কোনো রোগ বা অসুখ নয় বলেই ওষুধে নিরাময় হয় না। বিষয়টির বিজ্ঞানসম্মত দিকটি হল এটাই।