ঐতিহাসিক মহান ব্যক্তিত্ব মানবপুত্র বুদ্ধের জীবনাদর্শ ও তার প্রবর্তিত বৌদ্ধধর্ম-দর্শনের নৈতিক মানবিক মূল্যবোধ, সর্বজীবের প্রতি অহিংসা ও ভালোবাসা প্রদর্শন, সর্বমানবের কল্যাণ সাধন, সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠা, সাম্য-মৈত্রী-করুণা-মুদিতা-উপেক্ষার চর্চা এবং চারিত্রিকভাবে শুদ্ধ থাকার উপদেশ, সর্বোপরি অকুশল কর্ম বর্জন করে কুশল কর্ম সম্পাদন করার ও মনকে পরিশুদ্ধ রাখার শিক্ষা শুধু ভারতবর্ষে নয় সমগ্র বিশ্বে এক নতুন মানব সভ্যতার গোড়াপত্তন ঘটায়। অনেক বিশ্রুত পণ্ডিত-চিন্তক বৌদ্ধধর্মকে ধর্মের চেয়ে বেশি একটা সমাজবিপ্লব' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। দুঃখ নিরোধের মাধ্যমে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে ঈশ্বরের প্রয়োজন ও অস্তিত্ব অস্বীকার করা এবং বংশপরম্পরা চর্চিত হচ্ছে বা গ্রন্থে আছে বা গুরুর নির্দেশ বলে গ্রহণ না করে যুক্তি ও ন্যায়সংগত বিচারে সবার জন্য মঙ্গলজনক হলেই কোন নির্দেশকে গ্রহণ করার নতুবা ত্যাগ করার উপদেশ বুদ্ধকে বিশ্বের প্রথম আধুনিক ও বিপ্লবী মানুষে পরিণত করেছে। বুদ্ধের মতে মানুষ নিজের অন্তর্নিহিত শক্তির দ্বারা উঁচু আদর্শে বা স্থানে পৌঁছতে পারে, এজন্য অলৌকিক বা অদৃশ্য শক্তির প্রয়োজন পড়ে না, প্রত্যেকে নিজ নিজ সাধনা বা অধ্যবসায় গুণে মুক্তি অর্জন করবে, নিজেই নিজের নিয়ন্ত্রণ বা ত্রাণকর্তা। বুদ্ধ শুধু পথ দেখাতে পারেন, পরিত্রাণকর্তা নয়। বুদ্ধের মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে মহীয়ান করেছে, মানুষের আত্মমর্যাদা আত্মশক্তির গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে। বুদ্ধের এসব প্রাগ্রসর চিন্তা-শিক্ষা আদেশ-উপদেশ সম্পর্কিত ব্যক্তিগত উপলব্ধি, কয়েকজন মহান জ্ঞানীর অনুভূতি ও গৌরবোজ্জ্বল কাজ এবং বুদ্ধের আদর্শের সংঘে সমর্পিত কয়েকজন প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তির জীবন ও কর্ম-কীর্তি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে লেখক শিমুল বড়ুয়া রচিত ২৫টি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের সংকলন হচ্ছে 'মানবপুত্র বুদ্ধ চিন্তনে-জাগরণে' গ্রন্থটি। শিক্ষাবিদ শিমুল বড়ুয়া একজন মেধাবী যুক্তিবাদী নিষ্ঠাবান প্রাবন্ধিক গবেষক। তাঁর লেখায়-গবেষণায় একজন ইতিহাস-ঐতিহ্যানুরাগী সমাজসচেতন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রগতিপন্থী প্রাবন্ধিককে খুঁজে পাওয়া যায়। গতানুগতিক-অস্বচ্ছ-পক্ষপাতদুষ্ট। চিন্তার প্রাগ্রসর-সময়োপযোগী-বিজ্ঞানমুখী ভাবনার বহিপ্রকাশ ঘটে তাঁর লেখনিতে। প্রচারবিমুখ নিভৃতচারী নিষ্ঠাবান প্রাবন্ধিক ও পরিশ্রমী গবেষক অধ্যাপক শিমুল বড়ুয়া ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকর্ম সম্পাদন করে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছেন, মননসাহিত্যে রেখেছেন কৃতিত্বের উজ্জ্বল স্বাক্ষর। মানুষ হিসেবে শিমুল বড়ুয়া সহজ-সরল, অমায়িক সদালাপী, সৎ-উদার এবং মানবিক গুণসম্পন্ন। চিন্তা-চেতনায় বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক, বাইরে প্রগতিশীল, সত্যনিষ্ঠ এবং জ্ঞানানুসন্ধিৎসু। শিমুল বড়ুয়া শৈশব-কৈশোরে বাবা-মা'র মুখে শুনেছেন পরিবারের পূর্বপুরুষরা সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা করতেন, পারিবারিক সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ছিল, উঠানে প্রতি বছর নাটক মঞ্চস্থ হতো; কিন্তু দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে তাঁর অবচেতন মনে রোপিত হয়েছিল মনন-সৃজনশীলতার বীজ যা অঙ্কুরোদগমের জন্য যথোপযুক্ত সময়-পরিবেশের অপেক্ষায় ছিল।