মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারির জঙ্গলে প্রায় হাজার ফুট গভীর খাদের নিচে এক রহস্যময় উপত্যকা— পাতালকোট। এখানকার ভারিয়া আদিবাসীরা এখনও প্রায় পাঁচশ বছর প্রাচীন জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত। শোনা যায়, শুধুমাত্র নুন সংগ্রহ করতে উপত্যকার বাইরে আসে স্বনির্ভর ভারিয়ারা। মহাভারতে পঞ্চপাণ্ডবের অজ্ঞাতবাসের সময় দুর্যোধনের গুপ্তচররা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াত পাণ্ডুপুত্রদের। সেই সময় ভারু নামের ঘাস দিয়ে একপ্রকার অস্ত্র বানিয়ে এই আদি বাসিন্দাদের গুপ্তচরদের সঙ্গে লড়াই করতে পাঠিয়েছিলেন মধ্যম পাণ্ডব অর্জুন। সেই থেকেই এদের নাম হয় ভারিয়া। রামায়ণের রাক্ষস কুলের রাবণপুত্র মেঘনাদই ভারিয়াদের উপাস্য। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই উপত্যকার ‘রাজা-খো’ অঞ্চলে নাকি লুকিয়ে আছে পাতালদ্বার, আর ভারিয়া আদিবাসীরাই হল পাতালদ্বারের রক্ষক। তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে মারা যান নাগপুরের দ্বিতীয় রাঘোজি ভোঁসলে। রাঘোজির পুত্র পার্শ্বজিকে হত্যা করে সিংহাসন দখল করেন মুধোজি ভোঁসলে, উপাধি নেন আপ্পাসাহিব। কিন্তু ব্রিটিশ কোম্পানির দাপটে আপ্পাসাহিব সিংহাসনচ্যুত হলেন। সদলবলে পালিয়ে গেলেন মহাদেব পাহাড়ে। প্রায় ছয় বছর ব্রিটিশ কোম্পানির সেনার সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে শেষে ক্লান্ত হয়ে যোধপুরের রাজা মানসিং-এর রাজ্যে আশ্রিত থেকে গেলেন বাকি জীবন। মহাদেব পাহাড়ে থাকাকালীন ছয় বছর তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন হৃত সিংহাসন ফিরে পাওয়ার, এর জন্য গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করেন এক রুদ্রগণিকাকে। শোনা যায় রুদ্রগণিকার ক্রোধ ও আপ্পাসাহিবের ভুলের পরিণতিতেই অভিশপ্ত হয়ে পড়ে পাঁচমারির জঙ্গলের ‘রাজা-খো।’ কী ছিল সেই ঐতিহাসিক ভুল? কে এই রুদ্রগণিকা? অভিশপ্ত ‘রাজা-খো’ এলাকার গুহায় গত আট বছর ধরে যে বিভীষিকা ঘুরে বেড়ায়, সে-ই বা কে? বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক অংশুমান বর্ধন কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে মধ্যপ্রদেশে এসে হঠাৎ রহস্যজনক ভাবে মারা গেলেন। তাঁর মৃত্যুর সময় যে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি সঙ্গে ছিলেন তাঁর পরিচয় কি পাওয়া যাবে? আমদানি রপ্তানি অফিসে কর্মরত অনন্য চৌধুরী নিজের ফ্ল্যাটে ক্লায়েন্টের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করতে গিয়ে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন। গভীর রাতে কলকাতার নবনির্মিত ফ্ল্যাটের দেওয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে এল পচাগলা মৃতদেহ। এমন অদ্ভুত অব্যাখ্যাত ঘটনা তো অনন্যর জীবনে এই প্রথম নয়। কিন্তু কীসের প্রভাবে বারংবার ব্যাখ্যাহীন ঘটনার সম্মুখীন হন অনন্য? পূরবী, অনিকেত, বাদশা আর দেবকান্তি চার বন্ধু মিলে শুধু রহস্য রোমাঞ্চ ও অলৌকিকত্বের টানে তৈরি করেছিল ‘রহস্য শিকারি’ ইউটিউব চ্যানেল। কুখ্যাত ভূতুড়ে বাড়ি ও রহস্যময় ঘটনাগুলো ক্যামেরাবন্দি করে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করাই ছিল ওদের নেশা। অনন্যর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ওরা পাড়ি দিল মধ্যপ্রদেশ। কিন্তু সত্যিই কি কোনও রহস্যের সম্মুখীন হতে পারবে ওরা? কোন রহস্যকে গর্ভে লুকিয়ে রেখেছে ‘পাতালকোট’?