“বিশ্বস্ত এবং বিশুদ্ধ কাব্যিক শুভ্র ও পবিত্রবোধ থেকেই আমি ঘোষণা করি-আমি কবি। কবিকে হয়ে উঠতে হয় রচনা করতে হয় এবং রচিত হতে হয়। হয়ে ওঠার নিরন্তর সাধনাই রচনার বোধ ও আবেশে কবিতাকে কবিসত্তার বিশিষ্ট অস্তিত্বের 'নির্মিতি দান করে। আমি মনে করি মহৎ কবিতা যিনি নির্মাণ করবেন তার থাকা প্রয়োজন অভিনব ও অবিস্মরণীয় কল্পনাশক্তি ও সূক্ষ্ম বিবেচনা এবং নির্মিতি প্রকৌশল। কবিতা শুধু নির্বাচিত শব্দের বিন্যাসই নয় নির্বাচিত কথন ভঙ্গিতে অবশ্যই নির্বাচিত বোধের রূপায়ণ। কবির কাজ তার বক্তব্য ও সৃষ্টিকে শিল্পময়তায় সচেতন পাঠকের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রত্যয়ের ভেতরে স্থান করে দেওয়া। আসল কথা জীবনলগ্নতা, সমাজলগ্নতা, প্রকৃতিলগ্নতা, আশ্চর্যবোধলগ্নতা- যা মূলত কবির ধ্যানমগ্নতার মধ্য দিয়ে জারিত হয়ে স্মরণীয় ও অবিস্মরণীয় বাক্যবন্ধের সুষমায় প্রকাশিত হয়, তার নাম কবিতা। কবির মনোমগ্নতা, দর্শনমগ্নতা এবং ধ্যানমগ্নতা পরিশ্রুত হয়ে এমন রহস্যময় বোধের জগৎ বেরিয়ে আসে যা কবিকেও বিস্মিত করে এবং যোগ্যতম অভিজ্ঞ পাঠককেও বিস্ময়াবিস্তৃত করে তোলে। প্রকৃত কবিতা আবেগ যেমন দাবি করে তেমনি মাত্রাতিরেক আবেগ থেকে নিষ্কৃতিও চায়। এবং কবিতা ব্যক্তিত্বের অনুভূতির অভিব্যক্তির প্রকাশই নয় শুধু ভারবাহী ব্যক্তিত্ব থেকে নিজের মুক্তিকেও নিশ্চিত করে। কবি অন্তর্গত অপরিমেয় সত্যকে জানেন। আবার জানেন সৃজনের এ কাজটি সর্বত্র সচেতনে সংঘটিত হয় না। সচেতন ও অসচেতনের এক অসাধারণ সম্মিলনে সৃজন আরকে ও বিক্রিয়ায় রূপ ধরে রূপ নেয় মহৎ কবিতা এ কারণেই কবিতা মহৎ কবি এবং শুদ্ধতম মাতালের বিশুদ্ধতম ধন। মনে রাখতে হবে একজন কবির স্নায়ু ও হৃদয়ে গভীরতম ধ্যানমগ্নতায় ও বিষয়লগ্নতায় বাস করেন বিচিত্র অভিনিবেশে মহাজগতের মহাপৃথিবীর অজস্র সহস্র ধ্যানী কবি। সকলের যোগে অন্তর্গত অন্তলীন ধ্যানমগ্ন মাতাল সৃজন প্রতিভায় রচিত হয় শিল্প যে শিল্প মাতালের ধন-যুগে যুগে কালে মননের দর্শনের জগতে এর অন্যথা নেই, অন্য কোনো নাম নেই- কবিতা ও শিল্প ছাড়া। . ফাউজুল কবির ১৬ ডিসেম্বর ২০২০