চৈত্রমাসের দিনে, নিম গাছে গাছে, সবজে-সাদা ফুল ফোটে। অনেক অনেক ঝিরিঝিরি ফুল। ডালে ডালে তখন নতুন পাতারাও ঝলকে ঝলকে ওঠে। সেই নতুন পাতার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় সেইসব স্কুলে ক্ষুদে ফুল। শু বাতাসে বাতাসে ভাসতে থাকে সৌরভ। ঝুম পাগল করা পুষ্প- সৌগন্ধ। মিহিমধুর। মুগ্ধকর। মোহকর। সেই সুগন্ধের ঝাপটায় স্তব্ধ হতে হয়। মোহিত হতে হয়। আরশাদ সিদ্দিকীর কবিতা অমনই মোহমাখানো, স্তব্ধতা জাগানিয়া। জীবনের উন্মেষ পর্বের পর ক্রমে আমরা পাই আমাদের কৈশোর। কৈশোর নিয়ে আসে মার্বেল খেলার দিন। সে মার্বেলের কমলা হৃৎপিণ্ড আমাদের ব্যাকুল-অন্ধ করে দিতে থাকে। আসে তখন ঘুড়ি ওড়ানোর মওসুম! আসে বানকুড়ালি পাওয়া ঘুড়ি হওয়ার সাধ। আকাশের শূন্যতায় হারাবার বাসনারা ডাক দিতে থাকে। অহর্নিশি ডেকে ডেকে যায়! জলের সবুজ সুগন্ধ নিয়ে জেগে উঠতে থাকে নদী! একান্ত নিজস্ব নদী। সে ছলকে ছলকে ওঠে! এইসব কিছু নিয়ে আমাদের জীবন ক্রমে মাথা উঁচিয়ে থাকে-মধ্যাহ্নবেলার তরু ও তরঙ্গের দিকে, তিতিরের নিরালা ভ্রমণ ও তিমিরের শীতলতার দিকে! বিফল তপস্যা ও অশ্রুর বন-পাহাড়ের দিকে! প্রণয়-কুহকের দিকে। দ্রোহ ও নৈঃশব্দ্যের দিকে। মাথা উঁচিয়ে থাকে- অজস্রবার মরে যেতে থাকার দিকে। সেই মৃত্যুর অন্য নাম নৈঃশব্দ্য! অগাধ, অপার নৈঃশব্দ্য! জীবনের এই একাকী পরিব্রাজনের সরল-জটিল সেই ইতিকথাটুকুকেই কবিতাকাঠামো দিয়েছেন আরশাদ সিদ্দিকী। তুমুল আবেগ, গহন নিঃঙ্গতাবোধ, সরল ভাষাভঙ্গী এবং চেনা চিত্রকল্প মিলেমিশে এইখানে অবয়ব নিয়েছে কবিতার! শত সহস্র শব্দ উচ্চারণ করে করেও আদতে আমরা পলেপলে সৃজন করে চলি নৈঃশব্দ্য। বুনে তুলি একাকীত্ব! এই বইয়ের কবিতায় কবিতায় সেই ঘন সত্যকেই কবি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।