আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো একে অপরের সাথে মিলেমিশে লেপ্টে গিয়ে হয়ে যায় যখন একাকার, আবেগের কলহ তখন উকিঝুঁকি দেয়, বেরিয়ে আসে যখন-তখন। মন, মানুষ, মাটি আর নিসর্গ-প্রেমিক কবি-কথাসাহিত্যিক 'রাহমান ওয়াহিদ' তাদেরই একজন। প্রেম ও প্রসন্নতার সন্ধানে তার এই কাব্যপথের চলাকে সহসায় তিনি সংক্রমিত করতে পারেন ষড়রিপুময় ভ্রমণে। আমাদের পাঁচ ইন্দ্রিয়ের সাথে যখনই নতুন আরেক ইন্দ্রিয়ের যোগসাজস ঘটে তখনই দেখার, শোনার, জানার, বোঝার তথা অনুভব-অনুভূতির মাত্রাগুলো অন্য দশজনের চাইতে কিছুটা হলেও আলাদা হয় বটে। যেমন ঘটেছে কথাসাহিত্যিক 'রাহমান ওয়াহিদ' এর ক্ষেত্রে। জগৎটাকে তিনি দেখতে চেয়েছেন অন্য এক কালস্রোতের মধ্যে। যা কখনো উদাসীনভাবে বহমান। কখনো বন্দি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের আলাদা আলাদা গুপ্ত কুঠুরিতে। একজন লেখককে জানা বা বোঝার সহজ উপায় হলো তাকে আচ্ছা মতো পাঠ করা। রাহমান ওয়াহিদ-এর 'আতোর আদুরি উপাখ্যান' উপন্যাসটি আমি পড়লাম। বিবিধ প্রচেষ্টার গণ-সম্মিলনে বলা যায় নির্ঘাত এটি একটি সুউচ্চ নির্মাণ প্রকল্প। যার মধ্যে লুকিয়ে আছে বুদ্ধিদীপ্ত তারুণ্যশাণিত শব্দের খেলা। আছে প্রকরণ, প্রসঙ্গ, আঙ্গিকে এই গ্রন্থ অতৃপ্তি ও অভুষ্ট অন্বেষার বৃহৎ এক বিস্ফোরণ। বাংলা সাহিত্যের আবহমান ঐতিহ্যের ধারায় স্নাত হয়ে, লেখক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন বেশ আগেই। নিজস্ব স্বর দিয়ে অর্জন করেছেন স্বকীয়তা। কাব্য, গল্প, উপন্যাসে কলরব তোলা 'রাহমান ওয়াহিদ' আরও ডিটেলস-এর ডাক শোনাতে বিস্ময় আর বাস্তবতার মূল খতিয়ানখণ্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তার নিজস্ব চিরচেনা জমির উপরে। ইতিহাস যেখানে কথা বলে সেই পুণ্ড্রনগরীর তথা বগুড়ার আঞ্চলিক কথন নিয়ে হাজির হয়েছেন আলোচ্য উপন্যাসে। যেখানে ঠাঁই পেয়েছে নারী, স্বদেশ, সমাজ, সভ্যতা, কৃষ্টি-কালচার কখনোবা নস্টালজিয়ার নিরন্তর আঁকিবুকি। দিনের আলোর মতো জ্বলজ্বলে চরিত্রগুলোর সাথে খেলেছেন সাপলুডো আর গড়ে তুলেছেন অসামান্য সাহিত্যের সাতকাহন। সহৃদয়-হৃদয়-সংবেদী এই কথাসাহিত্যিকের ভাষাশৈলী প্রখর, স্মার্ট, সর্বোপরি আধুনিক। ভাষার আঞ্চলিকতা জানি পাঠ্যে অনেকটা ব্যাঘাত ঘটাবে, তবু বলি ধ্বংস আর গড়ার এ খেলায় পাঠক আসুন সাবধানে আমরা তাকে পড়তে শুরু করি। . শিবলী মোকতাদির কবি-প্রাবন্ধিক