আধুনিক বাংলা কবিতায় কালোত্তীর্ণ দুই কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশ। দুজনের জন্ম একই বছরে, ১৮৯৯-তে। দৃষ্টিভঙ্গির স্বাতন্ত্র্য নিয়ে দুজনই ইতিহাস ও ঐতিহ্যসন্ধানী, জীবনমুখী, নবজীবন-সঞ্চারী। রবীন্দ্রবলয় অতিক্রমণে এঁদের কাব্যপ্রচেষ্টায় বাংলা কবিতার যে বাঁক্বদল ও গতিসঞ্চার বস্তুত সেই গতিপ্রবাহ ও কাব্যানুপ্রেরণাতে আজও বাংলা কবিতা পরিভ্রমণরত; আধুনিক বাংলা কবিতার আজকের যে রূপ-রস-গন্ধ বোধকরি নজরুল-জীবনানন্দই তার আদর্শ। তাই, বিবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে নজরুল ও জীবনানন্দের কবিতার ব্যাখ্যা-বিচার-বিশ্লেষণ আজও গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে পুরাণ বা মিথ হচ্ছে মানুষের সামূহিক চৈতন্যেরই এক প্রত-উপাদান, অপরদিকে চিত্রকল্প বা ইমেজারি হলো কবিকল্পনা-মনীষার সৌষম্যকলার স্বাক্ষরবাহী; যা কবিতার মূল চেতনাকে প্রকাশ করে। ফলত, কবিতার রসাস্বাদনে পুরাণ ও চিত্রকল্পের ব্যবহার বৈচিত্র্য ও প্রয়োগনৈপুণ্য আবিষ্কার হয়ে দাঁড়ায় অত্যাবশ্যকীয়। এমন বিবেচনা থেকেই ‘নজরুল ও জীবনানন্দের কবিতায় পুরাণ ও চিত্রকল্প’ শীর্ষক গবেষণাকর্মটির প্রয়াস। এই গবেষণাকর্মে প্রথমত পুরাণ ও চিত্রকল্প অনুষঙ্গী রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ-পদ্ধতি এবং দ্বিতীয়ত তুলনামূলক-পদ্ধতি সর্বাত্মকভাবে প্রাধান্য পেয়েছে। দুই কবির মানস কিংবা তাঁদের স্বতন্ত্র কাব্যবোধ ও কবিপ্রবণতা নির্ণয়ে তাঁদেরই বিভিন্ন রচনার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। বাংলাসাহিত্যের গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য বইটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
জন্ম ১৪ জানুয়ারি ১৯৮৩ লালমনিরহাট। চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয়ের এক প্রাণিত পরিবেশে সম্পূর্ণ হয় তার স্কুল পর্যায়ের পুরো পড়াশুনা। তিনি লালমনিরহাট সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্বের উচ্চতর পাঠ গ্রহণ করেন বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ‘নজরুল ও জীবনানন্দের কবিতায় পুরাণ ও চিত্রকল্প’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জেলা শহরের প্রকৃতিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেড়ে ওঠা এবং বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলায় অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে পাঠ নেয়া মাওলা প্রিন্স একজন কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। পেশায় অধ্যাপক। তিনি ০১ এপ্রিল ২০০৭ সালে বাংলা বিভাগ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। ০১ এপ্রিল ২০০৮ সাল থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিযুক্ত রয়েছেন। মাওলা প্রিন্সের তত্তাবধানে এখন পর্যন্ত স্নাতক পর্যায়ে ২টি এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ থিসিস সম্পন্ন হয়েছে। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : নিশীথপ্রদীপে শঙ্খঝিনুকের চাষ (২০১৩), দিবারাত্রি প্রেমকাব্য (২০১৪), সব ঠিক, ঠিক কি, ঠিকটা কী (২০১৯) ও আবার বছর কুড়ি পর (২০২০)। প্রবন্ধগ্রন্থ : কালোত্তরের প্রতিশ্রুতি : প্রসঙ্গ সাহিত্য (২০০৯), রশীদ করীমের উপন্যাস : বিষয়বৈভব ও শিল্পরূপ (২০১৪), অনুধ্যানে নজরুল (২০১৭) ও কথাসাহিত্য পাঠ ও রূপতাত্তিক বিশ্লেষণ (২০১৯)। অভিধানগ্রন্থ : নজরুল পৌরাণিক অভিধান (২০২০)। প্রকাশযোগ্যগ্রন্থ : নজরুল ও জীবনানন্দের কবিতায় পুরাণ ও চিত্রকল্প।