স্রষ্টা, তার নিজস্ব চিন্তার জগৎ এবং সৃষ্টিশীলতার জগৎ অন্যের চেয়ে আলাদা হতে বাধ্য। অভিজ্ঞতা ও কল্পনার মিশেলে স্রষ্টা যা সৃষ্টি করেন, তাতে একের সঙ্গে অপরের সাযুজ্য থাকতে পারে। কিন্তু গল্প বলার ধরন এবং নির্মাণ-কাঠামোর বৈচিত্র্যের জন্য প্রত্যেকে হয়ে ওঠেন আলাদা। শাম্মী তুলতুল তেমনি একজন স্রষ্টা, একজন গল্পকার, যার কাহিনি সমাজে সংঘঠিত ঘটনাসমূহের ধারাবাহিকতায় সম্পূর্ণরূপে প্রতীকি ব্যঞ্জনায় তাকে স্বতন্ত্র ব্যঞ্জনাদানে সক্ষম হয়েছেন। তার গল্পে যেমন নারীজীবনের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে, তেমনি প্রতিফলিত হয়েছে প্রেমের নিষ্ফল ক্রন্দন। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে শাম্মী নিজ অবস্থান থেকে একচুলও সরে যাননি। সেটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। তার লেখায় মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রমহারানো নারীরা সেই নাগপাশ থেকে বেরিয়ে এসে হয়ে উঠেছেন স্বদেশের জন্য আত্মত্যাগকারী মুক্তিযোদ্ধা। আর সেটিকে মর্মস্পর্শী কাহিনিবিন্যাসে উপস্থাপন করেছেন শাম্মী। সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে সমাজে যারা আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেননি, সুদীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও বঞ্চিত সেই বীরাঙ্গনাদের সম্মান ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে শাম্মী তুলতুলের গল্প একটি নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। তার ভাষার সাবলীল গতি প্রবহমান নদীর মতো বিন্যস্ত এবং কখনো কখনো তির্যক তিরের মতো ধারালো। শুরু ও শেষের মধ্যে যে ধারাবাহিকতা গল্পকে একটি আকর্ষণীয় অভিনবত্ব দান করে, শাম্মী তুলতুলের গল্পগুলো তারই অনন্য দৃষ্টান্ত। আশা করি, পাঠকের আকাঙ্ক্ষা মেটাবার ক্ষেত্রে গল্পগুলো নিরাশ করবে না। সে কারণেই এটাও জোরের সঙ্গে বলা যেতে পারে, এই গল্পগ্রন্থ পাঠকের আনুকূল্য লাভেও বঞ্চিত হবে না। . অসীম সাহা
শাম্মী তুলতুল এর লিখায় এক ধরনের ম্যাসেজ থাকে সব সময়।আছে সমাজ এবং সমাজ সচেতন করার এক প্রকার শক্তি।খুব অল্প বয়সেই তিনি দেশ ও দেশের বাইরে তার লেখনি দিয়ে জয় করেছেন অজস্র মানুষের ভালোবাসা।সাহিত্যিক শাম্মী তুলতুল চট্টগ্রামের একটি অভিজাত সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, উচ্চশিক্ষিত , রক্ষণশীল ও মুক্তিযুদ্ধ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।সেই সুবাদে পরিবারের লোকজনকে একদিকে যেমন দেখেছেন সাহিত্য চর্চা করতে। অন্যদিকে দেখেছেন রাজনীতিতে সমানতালে অংশগ্রহণ করতে।তাই লেখালেখি তার রক্তে মুক্তিযুদ্ধ তার চেতনায়। লেখালেখির হাতে খড়ি শিশু থেকেই।স্বরচিত ছড়া পাঠ করে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন শিশু বয়সেই। বাবা আলহাজ আবু মোহাম্মদ খালেদ একজন শিক্ষাবিদ, সংগঠক ছিলেন|বর্তমানে একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সমাজসেবক ও সংগঠক।মা আলহাজ কাজী রওশন আখতার ছিলেন রাউজান কলেজ ছাত্র সংগঠনের নেত্রী।শীর্ষে আছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা ও দেশের বাইরের প্রথম সারির পত্রিকাগুলোতে এক যুগ ধরে লেখালেখি করে। অধ্যায়ণ করছেন দেশ সেরা ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে।লেখালেখির পাশাপাশি চট্টগ্রাম বেতারে অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও চট্টগ্রাম টেলিভিশনে নিয়মিত আবৃত্তিও করে থাকেন।২০১৬ বইমেলায় তার রকমারি বেষ্ট সেলার দুটো বই, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রথম উপন্যাস “চোরাবালির বাসিন্দা” ও শিশু-কিশোরদের বই “গণিত মামার চামচ রহস্য” তাকে নিয়ে যায় দিগুণ খ্যাতির শীর্ষে।তার আরও দুটো বই হলো কলামের বই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, (২০১৩)।টুনটুনির পাখিস্কুল (২০১৪)। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ইতিমধ্যে জাতীয় পুরস্কারেও ভূষিত হন।