প্রণয় কান্তি, মিরসরাইয়ের ডোমখালি গ্রামে যার জন্ম, কেবল একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষকই ছিলেন না, প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর, সমাজসংস্কারক ও পরহিতব্রতী। নিয়মিত পাঠদানের বাইরেও তিনি চাইতেন শিক্ষার্থীদের মনে নানা বিষয়ে ঔৎসুক্য তৈরি করতে; কুসংস্কারমুক্ত, অন্ধবিশ্বাসহীন ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিশেবে গড়ে তুলতে। শিক্ষকতার বাইরেও তাঁর আরও একটি বড় পরিচয় তিনি কবি ও গদ্যকার। বুদ্ধির মুক্তি ও বেদনা মাধুরী, আকাশলীনার সাথে কিছুক্ষণ / As I loved you madly, অতঃপর মেঘের কাছে তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও লিখেছেন বহু কবিতা, বেরিয়েছে প্রবচন প্রদীপন নামে তাঁর একটি আলোকবিস্তারী প্রবচন সঙ্কলন। তাঁর কবিতায় ও গদ্যে যেন শক্ত এক আসনে বসে দ্রষ্টা হয়ে শনাক্ত করা হয়েছে সমাজের অন্ধকারাচ্ছন্নতা ও অপরাজনীতির অসুস্থতা। শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপই তিনি করেননি, আলোর দিকে মুক্তির পথও নির্দেশ করে গেছেন নানা লেখায়, প্রবচনে। শব্দছন্দের মধুর ঝঙ্কারে তাঁর কবিতায় উচ্চারিত হয়েছে হৃদয় খুঁড়ে তুলে আনা মানবিকতা। জেগে উঠেছে প্রেম আর প্রেমহীন হৃদয়ের শুষ্কতা, অভিমান আর অবমূল্যায়নের অসহনীয় অভিঘাত। প্রণয় কান্তির জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে তাঁর শিক্ষার্থী, সাহিত্যিক বন্ধু ও স্বজনেরা লিখেছেন স্মৃতিচারণমূলক ও মূল্যায়নধর্মী বেশকিছু লেখা। তাঁর জন্মবার্ষিক স্মরণসভা (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮) উপলক্ষ্যে চেয়েছি নির্বাচিত লেখাগুলো সঙ্কলনভুক্ত করতে যা প্রণয় কান্তির বহুমাত্রিক পরিচয় গভীরভাবে বুঝে নিতে সাহায্য করবে এবং ভাবীকালেও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে আমাদের। সঙ্কলনে তিনটি পর্বে সাজানো হয়েছে লেখাগুলো। এছাড়াও থাকল প্রণয় কান্তির সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি, তাঁর প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কিছু কবিতা, প্রবন্ধ ও প্রবচনগুচ্ছ। ছবির একটি অ্যালবামও জুড়ে দেওয়া হলো শেষে। যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এ-সঙ্কলন আর যাঁরা সহযোগিতা করেছেন নানাভাবে, সবাইকে অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।