গ্রামীণ আলোবাতাসে বেড়ে ওঠা অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া কিছু আনাড়ি ভাবনায় হঠাৎ দোল থেকে শুরু করে কবিতা। সেই থেকে কবিতার কনিষ্ঠতম আঙুলকে আশ্রয়া করে অষ্টাদশী কিশোরী মন দেহের সীমানা অতিক্রম করে বয়ে চলে জীবনের বিচিত্র প্রবাহে। ময়ূরপঙ্গী নারে চেপে ঢেউ তোলে শব্দের উত্থানে। ছোটছোট খেয়ালখুশি ইচ্ছেমত সাঁতার কাটে কবিতার সলিলে। কখনো তাকে মনে হয় শান্তরি এক নিটোল কিশোরী: কখনো মনে হয় অধরা এক অনির্বাণ রূপসী। কল্পনার ছায়াখেলায় কবিতার উপস্থিতি যেনো সীমাহীন কুয়াশার বন্দরে বহুল প্রত্যাশিত রবিরশ্মি। যার আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়েছে মননের তানপুরা। কাগজের সংসারে পল্লবিত কবিতারা মায়া মমতায় আগলে রাখে পরমপ্রিয়? নিজের মতো ভালোলাগাদের।>br> চাওয়া পাওয়ার রোদবৃষ্টিতে আমি ওদের সাজিয়ে রাখি নিভৃত অভিসারিকা মতো। সাধ্যমতো শিল্পীত প্রয়াসে ফুটিয়া তুলি কাব্যসুন্দরীর আঙিনা। যার হাত ধরে পথের ঢেউয়ে ভেসে যেতে যেতে দেখা হয় হাওড়পুরের সঙ্গে। তারপর জলের সংসারে জন্ম নেয় এক মানবীয় কবিতা, যার জন্ম না হলে আমার নতুন জন্ম হতো না। আমার চেনা মাকে পুনরায় জানতে শিখিয়েছে, বুঝতে শিখিয়েছে কবিতা। দেহের ভেতরে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা সেই একটি ভ্রূণের অদৃশ্য অস্থিত্ব অনুভব করতে করতে আত্মস্থ করেছিলাম বেঁচে থাকার এবং ভালো থাকার এক অনঙ্গ কৌশল। নিঃশ্বাসের পরতে পরতে সামাজিক সকল অসঙ্গতি হতে উত্তরে যাবার প্রতিধ্বনি শোনায় কবিতা। নাড়ীর ক্যানভাসে ফোঁটা সন্তান মায়ের মহাশক্তি, এ কথাও বুঝেছি কবিতার চোখে চোখ রেখে। তাই আমি মাতৃত্বের আরাধনা করেছি। কবিতাৰ্থ দিয়ে। আমার চড়ুইছানাটি যখন মাতৃগর্তে নিদ্রিত ছিল। তখনকার বিচিত্র অনুভূতি এখানে রূপায়িত হয়েছে এক কাব্যিক অনুধ্যানে। আমার প্রথম কাব্যের নাম রেখেছি “প্রকৃতি পাঠের আঠারো অধ্যায়।" এই সুন্দর নামটি আমাকে খুঁজে দিয়েছে কবি "দেবব্রত দাস"। যার দেখা না পেলে হয়তো আমার কবিতারা কালের স্রোতে তলিয়ে যেতো। দেবু শুধু আমার আশ্রয় কিংবা বাবুইসোনাটির বাবা নয় আমার কবিতাদের একজন অভিভাবকও বটে। যার কাছে আমি চিরকালের জন্য ঋণী। আরেকজনের কথা না বললে আমার আরাধ্যপ্রেমিকা কবিতা হয়তো আমার উঠোনে আঁকবে না পায়ের চিহ্ন। তিনি আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন, গুণীজন, চর্যাপদের বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক 'মাসুম খানা। যাঁর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তিনি যদি উদ্যোগ না নিতেন হয়তো আমার কবিতারা ছিন্নমুকুলের মতো হারিয়ে যেতো সময়ান্তরে। তিনি যেমন আমার কবিতাকে বইয়ের আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে দিয়েছেন সৃষ্টির সার্থকতা তেমনি আমাকে শাসন ও স্নেহের অভিভাবকত্ব দিয়ে সহযোগিতা করছেন দুর্গম পথ চলাতে। তাই আমার অশেষ কৃতজ্ঞতার অঞ্জলি দিলাম তাঁর করতলে। জানি না আমার কাব্যরচনার প্রাণান্ত প্রয়াস পাঠকের হৃদয়ে স্পর্শ রাখবে কিনা। এর একটি কবিতা কিংবা একটি পঙ্ক্তিতেও যদি পাঠকের মনে কোন আলোড়ন তৈরি করে তবেই সার্থক হবে আমার চর্চার পরিচর্যা।