গ্রন্থকারের কথা কওমী মাদরাসা মুসলিম উম্মাহর খালেস দ্বীনি শিক্ষা তথা ইলমে এলাহী, ইলমে নববী ও ইসলামী শিক্ষার অতীব প্রয়োজন কাজ আঞ্জাম দিয়ে আসছে প্রায় চৌদ্দ, পনেরো শতাব্দী ধরে। একমাত্র খালেস ইলমে ওহী তথা নিঙ্কুষ ঐশী শিক্ষাই হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড; অন্য কোন শিক্ষা নয় । কারণ মানব জাতির পরলৌকিক প্রয়োজনাদি সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ইলমে ওহীর বিকল্প নেই। সুতরাং জাতিকে ইলমে ওহী তথা কুরআন, হাদীস ও ফিকহের বিশুদ্ধ শিক্ষা ও নিদুষ দীক্ষা দিয়ে জাতির সুষ্ঠু মেরুদন্ড গঠনেরগুরুত্বপূর্ণ কাজই করে যাচ্ছে বিশ্বের কওমী মাদরাসা সমূহ । আল্লাহ এবং রাসুল সা.-এর অনুমোদিত শিক্ষাতথা কুরআন-হাদীস ও খাটি ইসলামী শিক্ষা এবং তার বাস্তব অনুশিলন ব্যতিত সভ্য, শান্ত সমাজ এবং শান্তিপ্রিয় ও সুশৃঙ্খল জাতি গঠন কস্মিনকালেও সম্ভব নয় এবং এ শিক্ষা ব্যতিত মুসলিম জাতি স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যসংরক্ষণও একেবারে অসম্ভব। এ শিক্ষা ধারায় শুধু শিক্ষা নয়; বরং শিক্ষা এবং দীক্ষা তথা শিক্ষার সাথে চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক সংশোধনের দীক্ষা বা আমলী প্রশিক্ষণও দেয়া হয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে; যা কেবল কওমী শিক্ষাঙ্গনগুলোরই বৈশিষ্ট্য। কওমী মাদরাসাগুলো শিক্ষার্থীদেরকে কুরআন-হাদীসের তা'লীম-তারবিয়তদিয়ে দেশ ও জাতির জন্য বিরাট এক দল আদর্শ সৈনিক তৈরি করে যাচ্ছে বিরামহীন গতিতে এবং সুশৃঙ্খল সমাজ ও সু-সভ্য জাতি গঠনের কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। এ শিক্ষাধারাই বিশ্ব হতে জাহিলিয়াতের ঘোর অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হয়েছিল অত্যন্ত তড়িত গতিতে। রাসুল সা. এর নবুওয়ত জীবনে মাত্র তেইশ বৎসরের সল্পকালীন সময়ের সংস্রব পেয়েবিশ্বের নিকৃষ্টতম বর্বরজাতিগুলো বিশ্বসেরা সোনালি মানুষে রূপান্তরিত হয়েছিল এ শিক্ষা ধারারই আলো গ্রহণ করে। হযরত আবু বকর রা. হতে শুরু করে বিশ্বের লাখ লাখ পীর-আওলিয়া, বুযুর্গ ও মহা মনীষীগণ এ শিক্ষা ধারারই গর্বিত ফসল। এ কওমী মাদরাসা শিক্ষা ধারা দেশ ও জাতিকে উপহার দিয়েছে বিরাট একদল ওয়ায়েয, মুবাল্লিগ, ইমাম-খতিব, মুদাররিস, মুহাদ্দিস, মুফতি, ফকিহসহ লাখো উলামা-মাখায়েখ ও বুযুর্গ মনীষী। এসব ওয়ায়েযগণ হাজারো মঞ্চ হতে, ইমামগণ লাখো মিম্বার হতে মুদাররিসগণ অসংখ্য দারস হতে, আধ্যাত্মিক বুযুর্গগণ অগণিত মজলিস হতে গোটা জাতিকে চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, ধর্ষণ-অপহরণ, অত্যাচার-অবিচার ও সন্ত্রাসসহ যাবতীয় বিশৃঙ্খলা হতে বিরত থাকার জন্য প্রতিনিয়ত হিদায়াত করে আসছেন। তাঁরা দেশের মানুষকে ন্যয়-ইনসাফ ও শান্তি-শৃঙ্খলাসহ তাবৎ সৎকাজের জন্য অনবরত নসীহত করে যাচ্ছেন। সুতরাং বুঝা গেল দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত রাখার ক্ষেত্রে এ কওমী মাদরাসার শিক্ষার অবদান অপরিসীম। শুধু তাই নয়; বরং দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার ভূমিকায়ও কওমী উলামারা হচ্ছে অতন্দ্রপ্রহরী। অতীতেও আগ্রাসী ইংরেজদের কবল থেকে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার আন্দোলনে কওমী উলামারাই ছিল অগ্রগামী । কওমী মাদরাসা সমূহে কুরআন-হাদীস, ফিকাহ, দর্শন, সাহিত্য ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা-দীক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জাগতিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও অস্ত্র তৈরি, বোমা তৈরির কলা-কৌশল, সাইন্স ইত্যাদি কওমী সিলেবাসে নেই। এসব বিষয়ে কওমী ছাত্ররা একেবারেই বে-খবর। তাইতো দেখা যায় কওমী শিক্ষাঙ্গনগুলো সর্বদায় শান্ত। দেশের কলেজ ভার্সিটিসহ অন্যান্য শিক্ষাঙ্গণগুলোর ন্যয় অস্ত্রবাজী, বোমাবাজী বা অন্য কোন অঘটনের দুই-চারটি নজীরও পাওয়া যাবে না কওমী মাদরাসা সমূহের ইতিহাসে। তা সত্ত্বেও বিগত কয়েক বছর ধরে ইসলাম দেশ ও জাতির চরম শত্রু,দেশের স্বাধীনতা চিন্তাইয়ের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দেশী-বিদেশী কতিপয় কুচক্রি মহল ও তাদের মিডিয়াগুলো শান্তির আধার ও স্বাধীনতার রক্ষাকবচ কওমী মাদরাসা সমূহকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে জোরে শোরে। অস্ত্রবাজি, বোমাবাজির বিভিন্ন নাটক সাজিয়ে অপপ্রচার ও গলাবাজি করে যাচ্ছে অত্যন্ত সুকৌশলে। আবার জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদসহ নানা অপবাদ আরোপ করছে কওমী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। শত্রুদের এহেন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ফাঁদে পড়ে অজ্ঞতা প্রসূত অনেক নামি-দামি ব্যক্তিবর্গও অনেক অশোভনীয় মন্তব্য করে যাচ্ছেন কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে। যার ফলে কওমী মাদরাসার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অবদান সম্পর্কে অজ্ঞ এমন অসংখ্য সরলমনা জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি চড়িয়ে পড়ছে অত্যন্ত তীব্র গতিতে । এসব বিভ্রান্তিরঅপনোদন প্রয়োজন দেখা দিয়েছে কওমী মাদরাসার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অবদান সম্পর্কে জন সাধারণকে সচেতন করার। তাই অধম শত ব্যস্ততা ও অক্ষমতা সত্ত্বেও কওমী মাদরাসা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অবদান প্রসঙ্গে বহু পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তিকা হতে খ্যাতনামা মনীষী ও নির্ভরযোগ্য লেখকদের কয়েকটি প্রবন্ধ, নিবন্ধ সংগ্রহ করে এবং প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে এবং বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত অধমের কয়েকটি প্রবন্ধ সংযোজন করে 'কওমী মাদরাসা কি ও কেন?' নামকরণ করে গ্রন্থাকারে জাতির সামনে তুলে ধরার প্রয়াস চালাই যাতে কওমী মাদরাসা সম্পর্কে সৃষ্ট বিভ্রান্তির নিরসন হয়। সফলতা, ব্যর্থতার বিচার পাঠকের হাতে। বইটি পড়ে পাঠক মহল কুচক্রিদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হবেন এবং তা প্রতিরোধের প্রয়াসী হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর তখনই এ নির্ঘুম শ্রম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করবো। আর মহান আল্লাহর কাছেই চাচ্ছি এর প্রতিদান । পরিশেষে, আল্লাহর কাছে বিনয়ী প্রার্থনা তিনি যেন দ্বীনের এ মারকাযগুলোকে কিয়ামত পর্যন্ত দায়েম, কায়েম, মায়ূন ও মাহফূয রাখেন এবং বইটিকে লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও প্রচারক সকলের নাজাতের ওসিলা হিসেবে কবুল করেন। আমীন। সকলের দোয়া প্রার্থী সফিউল্যাহ আল-মুস্তফা হাতিয়ূভী খাদেমে হাদীস, জামিয়া ওয়াসিকপুর ও জামিয়া কমরহাট। আলাপন: ০১৮১২- 336288, 01628-60820