রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানী ছিলেন না, কিন্তু বিজ্ঞান তাঁকে আচ্ছন্ন করে ছিল শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের সায়াহ্নকাল পর্যন্ত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত লেখা একটি বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ: ‘গ্রহগণ জীবনের আবাসভূমি’। এটি তিনি রচনা করেছিলেন মাত্র বারো বছর বয়সে। এর প্রায় পঁয়ষট্টি বছর পরে তিনি রচনা করেন বিশ্বপরিচয় নামে বিশ্বতত্ত্বের এমন এক অতুলনীয় গ্রন্থ, গবেষকরা যাকে অভিহিত করেছেন ‘কোনো ভারতীয় ভাষায় সাধারণ বিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রথম ও সম্ভবত অদ্যাবধি সর্বশ্রেষ্ঠ উপক্রণিকা’ বলে। তাঁর অন্যান্য রচনায়ও প্রচুর উপকরণ আহৃত হয়েছে বিজ্ঞানের জগৎ থেকে, উপমা কিংবা উৎপ্রেক্ষা হয়ে উঠে এসেছে বিপুল বৈজ্ঞানিক প্রসঙ্গ, নিপুনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে নানা বৈজ্ঞানিক তথ্য কিংবা তত্ত্ব। যার ফলে আমরা পেয়েছি সোনার তরী, বলাকা, শেষ সপ্তক, পত্রপুট, নবজাতক, রোগশয্যায়, আরোগ্য, জন্মদিনে প্রভৃতির মতো নানা বৈজ্ঞানিক উপাদানঋদ্ধ কাব্য। ইতোমধ্যে, তাঁর প্রয়াণের পরে, প্রায় একটি শতাব্দী অতিবাহিত হতে চললেও রবীন্দ্রসাহিত্যের এই দিকটির ওপর গবেষকদের তেমন সন্ধানী দৃষ্টি পড়েনি। রবীন্দ্রসাহিত্যে বৈজ্ঞানিক উপাদানের ব্যবহার রবীন্দ্ররচনার এই অনালোকিত দিকটির ওপর লেখকের একই শিরোনামের পিএইচডি অভিসন্দর্ভের গ্রন্থরূপ। বাংলাভাষার উভয় ভূখণ্ড – বাংলাদেশ ও ভারত – রবীন্দ্রসৃষ্টিকর্মের ওপর এই বিষয়ে এটিই সম্ভবত প্রথম এবং, এখন পর্যন্ত, একমাত্র অ্যাকাডেমিক গবেষণা। বৈজ্ঞানিক তথ্য ও তত্ত্ব কীভাবে অবলীলায় সাহিত্যের উপকরণ হয়ে উঠতে পারে, তা অনুসন্ধান করে এখানে এক নতুন রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করা হয়েছে।