ইতিহাস ও ঐতিহ্য একটি জাতির আত্মপরিচিতির সোপান। মানুষের জীবনাচার, কৃতিত্ব, ব্যক্তিত্ব, ঘটনাক্রম, সময় ও বাস্তবতার নিরিখেই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের যোগসূত্র সূচিত ও ক্রম প্রবাহিত। তা সৃজনে ব্যক্তিমানুষের অবদান যেমন ধর্তব্য, তেমনি ব্যক্তি প্রসারিত হয়ে কৃত্যের মাধ্যমে ব্যষ্টিতে রূপান্তরিত হওয়াও সত্য। জীবনাচরিত ইতিহাসও নয় সাহিত্যও নয়, যদিও ইতিহাস এবং সাহিত্যের সাথে এর প্রগাঢ় সংশ্লিষ্টতা। ইতিহাস রচনায় ইতিহাস লেখকের স্বাধীনতা আছে। তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ঘটনাসমূহের ব্যাখ্যা করতে পারেন কিংবা চরিত্রচিত্রণ করতে পারেন। কিন্তু জীবনী লিখতে গিয়ে জীবনীকার ইচ্ছামত লেখনী চালনা করতে পারেন না। তাকে অবশ্যই সত্যনিষ্ঠ ও পক্ষপাতশূন্য হয়ে জীবনচরিতের ঘটনাসমূহ যথাসম্ভব সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হয়। কোন ব্যক্তি সম্বন্ধে অসত্য কিংবা কল্পনাপ্রসূত বিবরণ দান করার কারো অধিকার নেই। সুতরাং জীবনী রচনায় লেখককে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয় যাতে অসত্য কিংবা পক্ষপাতমূলক কোন বিবরণ উপস্থাপিত না হয়। অনুরূপভাবে সাহিত্য রচনায় লেখকের নিজস্ব ভাবাবেগের প্রাধান্য থাকে। জীবনচরিত রচনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কৃতিত্ব বর্ণনায় হয়তো কিছুটা আবেগের আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু একে প্রাধান্য দেওয়া যায় না। মাত্রাতিরিক্ত স্তুতিবাদিতায় রচনার কলেবর বৃদ্ধি করা যুক্তিসঙ্গত নয়। অতিশয়োক্তি অনেক সময় দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে। আলোচ্য জীবনী গ্রন্থের রচয়িতা এ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান কৃতী ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা বিগত হয়েছেন তাঁদের জীবনেতিহাস এর সাথে কয়েকজন জীবিত ব্যক্তিত্বের জীবনচিত্র অতি সংক্ষেপে বিবৃত করেছেন। তিনি দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ করে ৯৫ জন ক্ষণজন্মা মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করছেন। একজন প্রকাশক হিসেবে তাঁর এই আয়োজন দেখে আসছি বেশ ক’বছর ধরে। তবে তিনি একজন সুলেখক বলেই এই অসাধ্য কাজটি সমাধা করতে পেরেছেন। যা ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নতুন প্রজন্মকে আলোর মুখ দেখাবে। চট্টগ্রামের কৃতী ব্যক্তিদের নিয়ে জীবনী গ্রন্থ রচনা এটাই প্রথম নয়। অম্বিকা চরণ চৌধুরী, বিএ আজাদ ইসলামাবাদী, আবদুল হক চৌধুরী, ওহীদুল আলম প্রমুখ খ্যাতিমান জীবনীকারদের রচনাবলীও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। তবে লেখকের এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আলোচ্য কৃতী ব্যক্তির সাথে পাঠকের পরিচিত করাই প্রধান উদ্দেশ্য বলে আমি মনে করি। এই প্রচেষ্টায় কিছুটা সফলতা অর্জিত হলে গ্রন্থ রচনা সার্থক হয়েছে মনে করবো। এবং গ্রন্থটি পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে এই কামনাই করছি। জামাল উদ্দিন প্রকাশক
এডভোকেট এ.এম জিয়া হাবীব আহসান চট্টগ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬৩ সনের ২৬ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি প্রখ্যাত আইনজীবী মরহুম আবু মোহাম্মদ য়্যাহয়্যা ও মহিয়সী নারী মরহুমা আলহাজ্ব জায়তুন আরা বেগমের একমাত্র পুত্র ও জ্যৈষ্ঠ সন্তান। মাতামহ মরহুম এডভোকেট এজাহার হোসাইন বি,এল (ব্যাচলর অব ল')। জনাব জিয়া হাবীবের সহধর্মীনি প্রিন্সিপ্যাল আশফা খানম চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিক ব্যারিষ্টার আমিনুল হক এর বড় মেয়ে। এডভোকেট জিয়া হাবীব ১৯৮০ সালে চট্টগ্রামের মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন। স্কুল জীবন থেকে তিনি লেখালেখির পাশাপাশি স্কাউট আন্দোলনের মাধ্যমে মানবাধিকার কর্মকান্ড ও পরোপকারী জীবন এবং কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজত্বত্ত্ব বিষয়ে অনার্স এবং মাষ্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৯০ সালে এলএল, বি পাশ করে ১৯৯৩ সালে আইন পেশায় যোগদান করেন। তিনি ২০০৯ সালে এলএল, এম ডিগ্রিও অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনে প্র্যাকটিসিং সনদ এবং ২০০০ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এর সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে টেক্স বার চট্টগ্রামের সদস্য পদ লাভ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি দীর্ঘদিন এ্যাসিস্টেন্ট পাবলিক প্রসিকিউটর এর দায়িত্ব পালন করেন এবং চাঞ্চল্যকার সীমা ধর্ষনের আলামত গোপন মামলায় এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর এর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের আইন উপদেষ্টা ও প্যানেল ল'ইয়ার হিসেবে কাজ করেছেন এবং করে আসছেন সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশন কর্তৃপক্ষ ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), ইউসিবিএল, আইবিবিএল, এফএসআইবিএল, ইবিএল, রূপালী ব্যাংক লিঃ, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিঃ, সাউথইষ্ট ব্যাংক লিঃ, এনসিসি ব্যাংক লিঃ, ফারমার্স ব্যাংক লিঃ, মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক লিঃ, আইসিবি ব্যাংক লিঃ, ইউনিয়ন ব্যাংক লিঃ, এনআরবি গোবাল ব্যাংক লিঃ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিঃ, চিটাগাং ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড কমিটি, ব্যাংক এশিয়া লিঃ (এক্স), যমুনা ব্যাংক লিঃ, ইসলামিক ফাইনান্স এন্ড ইনভেস্টম্যান্ট লিঃ (আইএফআইএল), বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ, এসজিএস বাংলাদেশ লিঃ, লুব-রেফ বাংলাদেশ লিঃ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্স, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ, চিটাগাং ডিভিশনাল পেপার মার্চেন্টস এসোসিয়েশন ইত্যাদি। পেশাগত জীবনে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ দেওয়ানী ও চাঞ্চল্যকর ফৌজদারী মামলা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে বন্দরটিলা ক্ষতিপূরণ মামলা, কক্সবাজার কারাগারে বিনা বিচারে আটক ৩৯জন বিদেশী বন্দিদের মুক্তির জন্য রীট মামলা, পুলিশ হেফাজতে সীমা ধর্ষনের আলামত গোপন মামলা প্রভৃতি উলেখযোগ্য। তিনি ১৯৯৪ সালে পেশাগত জীবনের প্রারম্ভিক কালে